এখনও আইসিইউতে বিচারপতি মানিক, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের (৭৪) শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা চলছে তার।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, ‘সাবেক বিচারপতি মানিকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আট সদস্যের গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আইসিইউ চিকিৎসা চলছে তার।’

কবে নাগাদ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে জানতে চাইলে ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করার পর মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন কবে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র (রিলিজ) দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগের চেয়ে তিনি কিছুটা ভালো আছেন। শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলছেন।’

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিকালে আদালত থেকে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে বাদাঘাট এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ‘আনফিট’ উল্লেখ করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী সন্ধ্যায় হাসপাতালে আনা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শামসুদ্দিন চৌধুরীর চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শিশির চক্রবর্ত্তীকে সভাপতি করে আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা সকালে শামসুদ্দিনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন।

মেডিক্যাল বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক শিশির চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘মূলত তার হার্টে সমস্যা আছে। ১০ বছর আগে বাইপাস সার্জারি করেছিলেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে। তবে এখন তিনি ভালো আছেন। অবস্থা উন্নতির দিকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। যাতে পরবর্তীতে আবার কোনও ধরনের সমস্যায় তিনি না পড়েন।’

মেডিক্যাল বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী হাসপাতালের চারতলায় সার্জারি ওয়ার্ড ৪-এর অধীনে আইসিইউ-২-এ ভর্তি আছেন। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে তার স্কোটাল ইনজুরির (অণ্ডকোষে আঘাত) অস্ত্রোপচার হয়। মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, শামসুদ্দিন চৌধুরীর যে অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই আঘাতটি নতুন। এর বাইরে বড় ধরনের জখম তার শরীরে ছিল না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহায়তায় আটক করে বিজিবি। শনিবার সকালে তাকে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওই দিন বিকালে আদালতে হাজির করলে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসাইন কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে আদালতে প্রবেশের সময় আদালত প্রাঙ্গণে থাকা বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ও আইনজীবী শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে বেধড়ক কিলঘুষি মারেন। অনেকে ডিম ছোড়ার পাশাপাশি জুতাও নিক্ষেপ করেন। কেউ কেউ শামসুদ্দিন চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে কটূক্তিমূলক স্লোগানও দেন এবং লাঞ্ছিত করেন। সেখান থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় অসুস্থ হলে পড়লে তাকে হাসপাতালে আনা হয়।