ঢাকা লিট ফেস্টে ‘ধরাবাঁধার বাইরে’ বাঁধন

মহামারির কারণে মাঝে খানিক (তিন বছর) দম নিয়ে ফের বসছে দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ‌‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। দেশ-বিদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথির নাম-সংখ্যা এবং বিষয়-বৈচিত্র্য-আয়োজনের আগাম তথ্য থেকে আভাস মিলছে, এবারের উৎসব ছাড়িয়ে যাবে অতীতের সব আসর।

৫-৮ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিতব্য এবারের আসরের অন্যতম আকর্ষণ ২০২১ সালে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। এছাড়া আসছেন ২০২২ সালের বুকারজয়ী দুই কথাশিল্পী গীতাঞ্জলি শ্রী (আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরি) ও শেহান কারুনাতিলাকা। আরও থাকছেন পুলিৎজার, নিউস্ট্যাড ইন্টারন্যাশনাল, পেন বা পিন্টার, প্রিক্স মেডিসিস, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, উইন্ডহাম ক্যাম্পবেল পুরস্কার, অ্যালার্ট মেডেল, ওয়াটারস্টোন চিল্ড্রেনস বুক প্রাইজ, আগা খান অ্যাওয়ার্ডসহ অন্যান্য খ্যাতিসম্পন্ন পুরস্কারজয়ীরা।

বিদেশি খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এতে অংশ নেবেন দেশের শীর্ষ শিল্পী-সাহিত্যিকরাও। এরমধ্যে বিশেষ দুটি সেশনে জায়গা করে নিয়েছেন কান-প্রশংসিত সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রধান আজমেরী হক বাঁধন। এরমধ্যে একটি সেশন পরিচালনা করবেন অভিনেত্রী নিজেই। ‘ধরাবাঁধার বাইরে’ শিরোনামের এই সেশনে বাঁধনের সঙ্গে নিজেদের মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন কিংবদন্তি অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন, প্রশংসিত অভিনেত্রী বন্যা মির্জা এবং সময়ের সবচেয়ে সফল অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। এটি অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি সোয়া ৪টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত একাডেমির মাঠে (লন)।

এছাড়াও ‘পুরুষত্ব বনাম পুরুষতন্ত্র’ নামের একটি সেশনে অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন বাঁধন। বন্যা মির্জার প্যানেল পরিচালনায় উৎসবের শেষ দিন (৮ জানুয়ারি) ১২টা ৩০ থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলবে এই সেশন। যেখানে বাঁধন ছাড়াও পর্যালোচকের আসনে থাকবেন ইরেশ যাকের, সায়ীদ আহমেদ, নবনীতা চৌধুরী, তকবির হুদা ও তাসফী হোসাইন।

আজমেরী হক বাঁধন

বাঁধন ব্যক্তিগত অবকাশে নিজ কন্যাকে নিয়ে এখন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখান থেকে এই উৎসবে যোগ দিতে দেশে ফিরছেন ৩ জানুয়ারি। তবে তার আগেই এ সম্পর্কে বিস্তর আলাপ করলেন বাংলা ট্রিবিউন-এর কাছে।

বললেন, ‘আমি খুবই সম্মানিত এ জন্য, আমাকে লিট ফেস্টে প্যানেলিস্ট হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলো। উৎসবটি নিয়ে এটা হলো আমার প্রথম এক্সপ্রেশন। তারপর হচ্ছে, যে দুটো টপিকে ইনভাইট করা হলো আমাকে, সেগুলো নানাভাবে হয়তো আমি বলি বিভিন্ন আড্ডা বা ইন্টারভিউতে। বাট এত বড় আকারে এমন একটি ইন্টারন্যাশনাল আসরে বসে সবার সামনে বিষয়গুলো বলার সুযোগ সম্ভবত আর পাইনি। এই যে কথাগুলো বলার জন্য বা শোনার জন্য লিট ফেস্ট আমাকে জায়গাটা দিয়েছে, এটা অনেক বড় বিষয়। বড় বড় গুণী মানুষ ও অডিয়েন্সের সঙ্গে মনের কথাগুলো শেয়ার করবো, তাদের কথাগুলো আমি শুনতে পারবো- এটা অনেক ভালো লাগার বিষয়।’

বাঁধন মনে করেন, তার দুটি প্যানেলে আরও যারা আছেন, তিনি ছাড়া বাকি সবাই অসম্ভব অভিজ্ঞ, জ্ঞানী ও গুণীজন। তার বিশ্বাস, গ্যালারিতেও তিনি পেতে যাচ্ছেন সেই মাপেরই প্রচুর দর্শক। এসব ভেবে বাঁধনের মন্তব্য, ‘দুটো সেশন নিয়ে আমি অ্যাকসাইটেড। আমন্ত্রণ জানাই সবাইকে- যারা এসব (যে দুটি বিষয়ে আলাপ হবে) নিয়ে ভাবেন, তাদের জন্য উচিত আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া।’

আগে থেকেই ঢাকা লিট ফেস্ট সম্পর্কে অবগত এই অভিনেত্রী। তবে এভাবে প্যানেল আলাপে ‍যুক্ত হতে দেখা যায়নি বাঁধনকে। এমনকি দর্শক হিসেবেও উৎসবটিকে হেঁটে দেখা হয়নি তার! ফলে এবারের পুরো আয়োজনটি বাঁধনের কাছে বেশ আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। এত বছর দূর থেকে দেখেছি, এমন একটি উৎসব হচ্ছে। শুনেছি এখানে গোটা বিশ্বের অনেক বড় বড় শিল্প-সাহিত্যের মানুষ আসেন, গল্প করেন। যেমন কান উৎসবে আমি অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনয়শিল্পী টিল্ডা সুইনটনের সঙ্গে বসে ছবি দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। অথচ সেই টিল্ডা তারও আগে (২০১৬) ঢাকা লিট ফেস্ট ঘুরে গেছেন। জেনেছি, এবারও আসবেন টিল্ডা। এটাও একটা ভালো লাগার বিষয়। শুধু টিল্ডা নয়, এবারের লিট ফেস্টে আমি চার দিনই সকাল-সন্ধ্যা যুক্ত থাকার চেষ্টা করবো। সবার কথা শুনবো। নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য এরচেয়ে আনন্দময় উৎসব আর হতে পারে না। চিন্তার যে আদান-প্রদান হবে সেখানে, সেটা অসাধারণ।’

আজমেরী হক বাঁধনএমন একটি শৈল্পিক এবং খুবই জরুরি উৎসব আয়োজনের জন্য ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানালেন এই অভিনেত্রী। যিনি গত দুই বছরে বিশ্বজুড়ে অর্ধশতাধিক উৎসবে অংশ নিয়েছেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর সুবাদে। লিট ফেস্টের বাইরে অভিনেত্রীর অপেক্ষা এখন দেশীয় ওয়েব সিরিজ ‘গুটি’ এবং বলিউডের ওয়েব ফিল্ম ‘খুফিয়া’র জন্য।

এদিকে বাঁধন, বন্যা মির্জা ছাড়াও ঢাকা লিট ফেস্টের এবারের আয়োজনে নাটক-সিনেমা-সংগীতের আরও অনেক তারকা অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সেশনে। এরমধ্যে রয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন, ব্যান্ড মেঘদল, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা প্রমুখ। একাডেমির নজরুল মঞ্চে রোজ সন্ধ্যায় বসবে গানের আসর। যার শেষ চমকটা থাকছে অর্ণবের নেতৃত্বে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’র পরিবেশনা।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার শুধু ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রবেশে কোনও টিকিট লাগবে না। দর্শনার্থীর বয়স ১২ বছরের বেশি হলে টিকিট বাধ্যতামূলক থাকছে। টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকা। তবে একসঙ্গে চার দিনের টিকিট নিতে চাইলে ছাড় মিলবে ৫০০ টাকা, সেক্ষেত্রে একেক জন দর্শনার্থী ১৫০০ টাকায় চার দিনের টিকিট পেয়ে যাবেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুখবর। তারা প্রতিজন ২০০ টাকায় টিকিট কিনতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের বেলায় একসঙ্গে চার দিনের টিকিট কিনলে লাগবে ৫০০ টাকা, অর্থাৎ তাদের জন্য থাকছে ৩০০ টাকা ছাড়।

আগ্রহীদের www.dhakalitfest.com লিংকে ঢুকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর টিকিট ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। অনলাইনের বাইরে সরাসরি যেসব স্থানে টিকিট পাওয়া যাবে– ঢাকা লিট ফেস্ট অফিস (নিকেতন, ঢাকা), মীনা সুইটস (বনানী এক্সপেরিয়েন্স জোন এবং পান্থপথ শাখা), মীনা বাজার (ধানমন্ডি ২৭, উত্তরা আউটলেট, ইসিবি চত্বর আউটলেট, শান্তিনগর আউটলেট, বনশ্রী এবং মগবাজার আউটলেট), বাংলার মিষ্টি (বনানী ও গুলশান আউটলেট), আড়ং (মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা আউটলেট) এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।আজমেরী হক বাঁধন