রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার কারণে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে

ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে ভাস্কর নভেরা মিলনায়তনে 'সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির বাংলা'  নিয়ে আলোচনায় ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। সঞ্চালনা করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মো. আহকাম উল্লাহ।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বেলা বারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এই আলোচনা সভা হয়।

একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পদক পাওয়া কবি কামাল চৌধুরী বলেন, বাঙালি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম জাতিসত্তা। বাঙালি একটু বেশি আবেগপ্রবণ। বাঙালি শংকর জাতিগোষ্ঠী। বাঙালি নেশন হয়ে উঠেছে ১৯৭১ সালে। বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়ে বাঙালি একটি জাতি হয়ে উঠেছে। অবশ্য এর আগেও বাঙালিকে জাতি হিসেবে গড়ে তোলা এবং গঠন করার জন্য কাজ করেছেন অনেকে। বাঙালি জাতি গঠনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। যেমন তৎকালীন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন বাঙালি উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জি। তিনিসহ আরও অনেক গুণী মানুষ বাঙালি জাতি গঠনে অবদান রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে—আমি যা করছি সেটাই সংস্কৃতি। তবে বাঙালি সংস্কৃতির সৌন্দর্য অনেক আগের। বঙ্গবন্ধু বলেছেন—ভারত হচ্ছে একটা পলিটিক্যাল ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ একটা কালচারাল ইউনিয়ন।   আজকে সংস্কৃতি রাজনৈতিক কারণে সংকটের মধ্যে পড়েছে। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি খুবই জরুরি। আজ রাজনৈতিক মতবিরোধ ও সামাজিক অবক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার কারণে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে। সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে আমাদের সকলকে নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। এবং সংস্কৃতি চর্চার যে জায়গাগুলো তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, সম্প্রীতি, সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশ এই তিনটি জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গ্রামীণ সমাজে পূর্বে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না‌। হিন্দু–মুসলিম ভেদাভেদ ছিল না। এখন সেখানেও ধর্ম অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করছে একদল ধর্মান্ধরা। বর্তমানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির অনেক অভাব। সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির মূল সংকট রাজনৈতিক, আবার সামাজিকও বটে। সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় শক্তি—সাম্প্রদায়িকতা দূর করা। রাজনীতিতে আজকে সংস্কৃতির অভাব।

গুরু চন্ডীদাশ বলেছেন—সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। আমাদের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে হবে।  যারা রাজনীতির নামে সাম্প্রদায়িকতা গড়ে তুলতে চায়, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের কে প্রতিহত করতে হবে। রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার পিছনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যেমন দায় আছে তেমনি আমার যারা সাংস্কৃতিক কর্মী আছি তাদেরও দায় আছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষের জীবন অনেকটা কাদামাটির মতো। একজন কুমার জানে তার মাটি দিয়ে সে কী একটা ব্যাংক বানাবে নাকি একটি পাতিল বানাবে। এটি সম্পূর্ণ তার মস্তিষ্কনির্ভর। আবার একজন কামার একখণ্ড লোহা থেকে ছুরি বানাবে না দা নাকি অন্য কিছু —সেটিও তার ইচ্ছা। আজকে রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সবচেয়ে বড় অভাব। তরুণ প্রজন্মকে যদি আমরা সাম্প্রদায়িকতা থেকে বের করে আনতে না পারি, বিজ্ঞানমনস্কভাবে জাগিয়ে তুলতে না পারি, তাহলে সমাজের যে অন্ধকার সেটা কখনও কাটিয়ে উঠতে পারবো না বলে আমি মনে করি।