'আইকনস: মিথ অ্যান্ড রিয়ালিটি'

দক্ষিণ এশিয়ায় সাহিত্যের সবচেয়ে বড় আসর ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিন চলছে আজ শনিবার (৭ জানুয়ারি)। শীতের সকালে বাংলা একাডেমির লনে 'আইকনস ফ্রম মেরিলিন টু মাও অ্যান্ড সাম মোর' শিরোনামে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালক সারা চার্চওয়েলের সঙ্গে এ আলোচনায় আরও অংশ নেন লেখক, সাংবাদিক ও অর্থনৈতিক ডমিনিক জিয়েগলার, সাংবাদিক ও লেখক ফ্লোরেন্স নইভিল্লে এবং প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট সুদীপ চক্রবর্তী। 

‘আইকন’, ‘আইকনিক ফিগার’ ও ‘সাধারণ মানুষের আইকন হয়ে ওঠা’ নিয়েই আলোচনা আবর্তিত হয়। মাও সে তুংয়ের আইকনিক ফিগার হওয়ার যাত্রা নিয়ে বিস্তর গবেষণা ও বই লিখেছেন আলোচক ডমিনিক জিয়েগলার। সেশনে তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা শোনান। বর্তমানে তিনি চীনেই বাস করেন। শি জিনপিংয়ের মাওয়ের মতো জনপ্রিয় হওয়ার প্রচেষ্টার কথাও বলেন তিনি।

আরেক আলোচক ফ্লোরেন্স মিলান কুন্ডেরাকে নিয়ে তার গবেষণা কর্মের কথা শোনান। চেকোশ্লোকেভিয়ার শাসক দলের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ফ্রান্সে চলে এসেছিলেন মিলান। সেখানে তিনি আইকনিক ফিগার হয়ে ওঠেন। অনেক সময়ই দেখা যায় আইকনরা তাদের নিজ সমাজ ও দেশে জনপ্রিয়তা না পেলেও অন্যদের কাছে সমাদৃত হয়ে ওঠেন। নিজ সমাজ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে নির্বাসিতও হতে হয় আইকনদের।

শাসকগোষ্ঠীরা যে যুগে যুগে জোর করে আইকনিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে এবং বেশিরভাগ সময়ই তারা সফলতা পায় সে সম্পর্কে বলেন সুদীপ চক্রবর্তী। তামিলদের সঙ্গে চলা যুদ্ধের সময় সাংবাদিকতা পেশার জন্য সেখানেই অবস্থান করছিলেন সুদীপ। যুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০ দিন আগে প্রেসিডেন্ট রাজা পাকসে তার নিজের ছবি দিয়ে এক হাজার রুপির নোট ছাপান এবং দেশটির মুদ্রা ব্যবস্থায় ছড়িয়ে দেন। একইভাবে ভারতে স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে নরেন্দ্র মোদির নামে নামকরণের কথাও বলেন তিনি। ১৯৯০ সালে তার চীন ভ্রমণের কথাও শোনান সুদীপ। ওয়ালেটে মাও সে তুংয়ের ছবি প্রিন্ট করা থাকতো তখন। এভাবে শাসক গোষ্ঠী জোর করে আইকনদের টেকসই করে রাখতে চায় নিজেদের স্বার্থে। 

অ্যাক্সিডেন্টাল আইকনদের নিয়েও কথা হয় আলোচনায়। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় হুট করেই আইকন হয়ে উঠেন যে কেউ। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু দিন পর মানুষ তাদের ভুলেও যায়। সুদীপ চক্রবর্তী আক্ষেপ করে বলেন, অনেক সময় যোগ্যরাও আইকন হয় ওঠে না। ল্যাবে বসে হাজার ঘণ্টা কাজ করে যাওয়া মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষরা বেশিরভাগ সময়ই জানতে পারে না। 

বর্তমান সময়ে বিত্ত-বৈভব ও যে কাউকে আইকনিক করে তুলতে পারে। আলোচক ফ্লোরেন্স এ উদাহরণে বিল গেটস, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্কের মতো মানুষদের কথা তুলে ধরেন।  

এক শ্রোতার প্রশ্নোত্তরে আলোচকরা বলেন, কাউকে আইকন করে তোলায় সাধারণ মানুষের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। জনপ্রিয়তা পাবার প্রবণতা সব মানুষদের মাঝেই থাকে। আমাদের দায়িত্ব বর্তায় সঠিকভাবে বিবেচনা করে তারপর কাউকে আইকন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।