নাটকে দর্শকের মনে নাড়া দেওয়া প্রয়োজন

নাটক হতে হবে সমসাময়িক জীবন বাস্তবতার দর্পণ উল্লেখ করে শিক্ষক, গবেষক ও নাট্যনির্দেশক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘নাটকে দর্শকের মনে নাড়া দেওয়া প্রয়োজন। নাটকে প্রশ্ন করা অত্যাবশকীয়’।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে ‘আনকনফাইন্ড’ শীর্ষক আলোচনা পর্বে রাজনৈতিক নাটকের বিন্যাস ও নাটক নিয়ে ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

পর্বটির সঞ্চালনা করেছেন শিক্ষক ও গবেষক শাহমান মৈশান। আলোচক সৈয়দ জামিল আহমেদের একসময়ে ছাত্র সঞ্চালক শাহমান বর্তমানে তার সহকর্মীও। তিনি দর্শক-শ্রোতা এবং আলোচকের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে আলোচনা পর্বটি জমিয়ে তোলেন।

সৈয়দ জামিল আহমেদ তার নির্দেশিত নাটক ‘মন্ত্রাস ৪.৪৮’ নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি আমার নাটকে দেখিয়েছি গুম হয়ে যাওয়া মানুষের প্রতিচ্ছবি।’ নাটকে দর্শকের মনে নাড়া দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন জামিল আহমেদ।

সৈয়দ জামিল আহমেদ নাটক নিয়ে বর্তমানের ভাবনা ও তা দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রে মনে করেন নাটক হতে হবে রাজনৈতিক ও সমসাময়িক। সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘নাটকে প্রাক্সিস (তত্ত্ব থেকে চর্চা) জ্ঞানের চর্চা না থাকলে সেটা আর নাটক থাকে না।’

প্রথম দিকের নাট্যভাবনা ও সমসাময়িক নাটকের চিন্তা নিয়ে সঞ্চালক প্রশ্ন করলে জামিল আহমেদ সহজভাবেই স্বীকার করে বলেন, ‘একসময় অভিনয়ের চেয়ে আমি দৃশ্যায়নকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতাম। ভাবে অভিনেতার সাথে আমার একধরণের দ্বন্দ্ব কাজ করতো। কিন্তু আমার সমসাময়িক  নাটকগুলোতে আমি মঞ্চ, দৃশ্যায়নের চেয়ে অভিনেতার সত্ত্বাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।’

মঞ্চনাটকে কথা বলার স্বাধীনতা নিয়ে সঞ্চালক শাহমান মৈশান জানতে চাইলে জামিল আহমেদ বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সমালোচনা করার স্বাধীনতা শিল্পের প্রতিটি শাখায় থাকা বাধ্যতামূলক। কথা বলার স্বাধীনতা না পেলে নাটকের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।’ উত্তর জাতীয়তাবাদ মুক্ত সমাজের কথাই ভাবে, যোগ করেন সঞ্চালক শাহমান মৈশান।

‘সাহিত্য-শাসিত নাটকে রাজনীতির উপস্থিতি’ নিয়ে জানতে চাইলে শহীদুল জহির রচিত জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার উদাহরণ টেনে জামিল আহমেদ বলেন, ‘নাটকে রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলেছি।’ একাত্তরের স্মৃতি আবার এই প্রজন্মের মানুষদের সামনে নিয়ে নিয়ে এসেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত ইতিহাস বের করে নিতে হবে। 

অ্যান্তেনিয়ো গ্রামসি'র হেজিমনি কি কোনোভাবে জাতীয়তাবাদকে আক্রান্ত করে— দর্শকের এই প্রশ্নে জামিল আহমেদ বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসনকে প্রতিহত করার জন্য আন্দোলন হতো। কিন্তু এখন আর ওই আন্দোলনের কোনও প্রয়োজন হয় না। একধরনের হেজিমনি তো কাজ করে যা জাতীয়তাবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’ 

শাহমান মৈশান। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের প্রশ্ন আসলে সঞ্চালক শাহমান মৈশান বলেন, ‘জামিল আহমেদ স্যারের নীল বিদ্রোহ নিয়ে গবেষণা মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে এই প্রজন্মের অনেকেরই ঊনিশ শতকে ঘটে যাওয়া নীল বিদ্রোহের কথা স্মৃতি থেকে মুছে গেছে।’

সৈয়দ জামিল আহমেদ এখানে যুক্ত করে বলেন, ‘১৯৭৫ এর পর আমার কাছে ডিমেনশিয়া মনে হয়। দেড়শো বছর পর হয়তো আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথাও ভুলে যেতে পারি।’

চলচ্চিত্রে বা নাটকে ‘ইসলামো ফোবিয়া’র প্রসঙ্গে জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমার নির্দেশিত নাটকে বা আমার নিজস্ব ভাবনার ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যারা ইসলাম ধর্মকে তাদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে পিছিয়ে দিচ্ছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি।’