ইনোভেশন নাকি ইনভেনশন?

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লিট ফেস্টের তৃতীয় দিন চলছে আজ। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কবি-সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, অ্যাকাডেমিশিয়ান, রিসার্চার আর উপচে পড়া দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমে উঠেছে সাহিত্যের এই মিলনমেলা। লিট ফেস্টের দশম আসরে আজ সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ইনোভেশন টক’ শীর্ষক  আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম বক্তা হিসেবে ব্র্যাকের ইনোভেশন তুলে ধরেন সংস্থাটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আসিফ সালেহ। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে তারা প্রায়ই নীতি নির্ধারক মহলকে ইনোভেশন সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন।’

ইনোভেশন এবং ইনভেনশন নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত হন। এ সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি। স্বাধীনতার পর যখন বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্র দেশ ছিল, তখন শিক্ষা প্রসারে নেওয়া ব্র্যাকের উদ্যোগগুলো নিয়েও আলোকপাত করেন তিনি। সে সময় খুবই কম সংখ্যক প্রাইমারি স্কুল ছিল। ফলে দরিদ্র পরিবারের বাচ্চারা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো। কারণ স্কুলের অবস্থান বাসস্থান থেকে বেশ দূরে এবং বাচ্চাদের তাদের বাবার সাথে কৃষিকাজ ও সাংসারিক কাজে সময় দিতে হতো। ব্র্যাক প্রতিটি গ্রামে মাত্র এক রুমের স্কুল স্থাপন করে। এসব স্কুলে শিশুদের যাবার সময় তাদের পরিবার ঠিক করে দিতো। কারিকুলাম ঠিক করার জন্য ব্র্যাক নিউজিল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ড থেকে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে এসেছিলো।

এছাড়া স্যানিটেশন সমস্যার সমাধান, যক্ষ্মা নির্মূলে ব্র্যাকের ইনোভেশন সম্পর্কেও বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘ডায়রিয়ার মৃত্যুহার কমাতে ব্র্যাকের ইনোভেশন সারাবিশ্বে প্রশংসিত। এক চিমটি লবণ, এক মুঠ গুড় আর আর আধা লিটার পানির যে স্লোগান তারা সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল, তা তখন ব্যাপকভাবে কাজ করেছিল।’

তিনি ব্র্যাকের বর্তমান সময়ে চলা একটি উদ্যোগের কথাও বলেন। ব্র্যাকের প্রফেশনালরা বর্তমানে প্রাথমিক মানসিক সেবা দিচ্ছেন। অবস্থা বুঝে অভিজ্ঞদের সাথে রোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। আসিফ সালেহর বক্তব্য শেষে দ্বিতীয় ও শেষ বক্তা হিসেবে আসেন খ্যাতিমান স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। কার্বন নিঃসরণের জন্য যে আর্কিটেকচার ও বিল্ডিং ইন্ডাস্টির দায় রয়েছে তা সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনে নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং এর ফলে সৃষ্ট বন্যায় যে দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার জন্য যে আমাদের উদাসীনতাই অনেকাংশে দায়ী সে সম্পর্কে সতর্ক করেন তিনি। মেরিনা তাবাসসুম তার প্রতিষ্ঠান মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টের একটি ইনোভেশন প্রজেক্টের গল্প শোনান শ্রোতাদের। সুইস সরকারের অর্থায়নে খুদিবাড়ি নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তারা। এর আওতায় সারা দেশের বিভিন্ন চরে ১০০টি স্থানান্তরযোগ্য বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন তারা। প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বাড়ির নিচের অংশ খালি থাকে এবং উপরের অংশে বাসিন্দারা থাকে। ফলে বন্যা বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তারা নিরাপদ থাকতে পারে। এছাড়া পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে খুব সহজেই বিভিন্ন অংশে খুলে পুরো বাড়িটিকে স্থানান্তর করা যায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রিফরস্ট্রেশন প্রজেক্ট নিয়েও কথা বলেন তিনি। রোহিঙ্গাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বন উজাড় করতে হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করছেন বৃক্ষরোপণ এবং বাগান করতে।