রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, আক্ষেপ চিকিৎসকদের

বিশ্বায়নের এই যুগেও রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে তা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা। শনিবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে  ‘হেলথ ম্যাটার্স’ শীর্ষক এক সেশনে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার তিন চিকিৎসক  ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ ও ডা. আর্সালা মুনটিয়ান-রক। সেশনটি সঞ্চালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট লেখক ও চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রেসা লিউইস।

জনস্বাস্থ্যের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন আলোচকরা। তারা সতর্ক করে বলেন, ‘মহামারির বৈশ্বিক প্রভাবে আমরা ভুলে যেতে বসেছি পৃথিবীতে রোগের কারণে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ ভাগই হয় অসংক্রামক রোগ থেকে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্গানিকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মালিহা মান্নান বলেন, ‘কিডনি জটিলতার মতো দুরারোগ্য বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হচ্ছে না। অসংক্রামক রোগের তথ্য ডাটাবেজে রাখার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ভালো করলেও পিছিয়ে আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।’ জনস্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করার কোনও বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তারা।

কোভিড-১৯ এসে জনসাধারণের ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় অনেকাংশে কমেছে বলে মনে করেন সুপরিচিত জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। প্রায় ৩০ বছর ধরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণেই টেলিহেলথ সেক্টরে পৃথিবীজুড়ে গণজোয়াড় এসেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেলিহেলথ সেবা গ্রহণ করার আগ্রহ এখনো ততোটা নেই।’ এজন্য উদ্ভাবনী উপায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির দিকে জোর দেন তিনি।

ডা. মালিহা মান্নান। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

অস্ট্রিয়া-ভিত্তিক একটি বেসরকারি ক্লিনিকের কর্ণধার আর্সালা মুনটিয়ান-রক কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় পশ্চিমা জনগোষ্ঠীর মনোভাব বিশ্লেষণ করেন। তার মতে, যখন ভ্যাকসিন ছিল না, তখন সবাই নিজের জীবন নিয়ে চিন্তিত ছিল; যখন ভ্যাকসিন এলো, তখন অনেকেই ভ্যাকসিন-বিরোধী আচরণ করতে শুরু করলো। এজন্য কোয়ারেন্টিনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকাকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেন তিনি। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এধরনের সময় বিশেষজ্ঞ পরামর্শের শূন্যতায় মানুষ আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে পরে। তাই টেলিহেলথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

স্বাস্থ্যসেবা পেতে জটিলতা থেকে উত্তোরণের প্রধান পথ হিসেবে আলোচকরা সঠিক যোগাযোগকে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা প্রয়োজন। সেজন্য প্রয়োজনে স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মাধ্যমে হলেও স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা দেওয়া যেতে পারে।