বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা

কবিতা-সাহিত্যের অন্যন্য মাধ্যম। বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা কেমন হবে— ভাষার বিবর্তন কিংবা ভাষার মৃত্যুতে কবিতাও কি বিপন্ন হবে? কবিতা আগামী মানুষের জীবনযাপনে কতটা প্রভাব ফেলবে? এমন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে ঢাকা লিট ফেস্টের চতুর্থ দিন রবিবার (৮ জানুয়ারি)। 

এদিন সকালে বাংলা একাডেমির লনে ‘বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা’ শিরোনামে সেশনটি সঞ্চালনা করেন কবি আশরাফ জুয়েল।  আলোচনা করেন জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ও পশ্চিমবঙ্গের কবি গৌতম গুহ রায়। আলোচানায় কবি ও কবিতার নানা দিক দিয়ে আলোচনা হয়।  ভবিষ্যতে কারা কবিতা পড়বেন, ভবিষ্যতের কবিতায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব কতটুকু থাকবে— সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে কবিদের বক্তব্যে।

বাংলা ভাষার জন্য যারা লড়াই করছেন তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কবির প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। সব ভাষার মূলে হচ্ছে চেতনা।  ভাষার কোনও বৈরিতা নেই। বাংলা আমার প্রকৃতির ভাষা। বাংলা ভাষায় আমি সতস্ফূর্ত। অনুবাদ হচ্ছে ট্রানজিট। অনুবাদের মধ্য দিয়ে  এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত হয়।’

পশ্চিমবঙ্গের কবি গৌতম গুহ রায় শেকড়ের জন্য প্রবল অনুসন্ধান করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি কর্তৃক বিনয় মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার এবং লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কারের মতো অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

ছবি: বাংলা ট্রিবিউন/নাসিরুল ইসলাম

আলোচানায় গৌতম গুহ রায় বলেন, ‘আজকের দিনে মানুষ কিন্তু একক হয়ে গেছে। অধিকাংশ ভাষা লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ভাষা যখন বিপন্ন, মানুষ যখন বিপন্ন তখন কবিতা কী হবে? মানুষকে জন বিচ্ছিন্ন করার যে প্রক্রিয়া সেখানে কবিতাও বিপন্ন করতে পারে?’

‘বিশ্বায়নের কবিতা হবে মুক্ত কবিতা’ উল্লেখ করে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাংলাকে আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর শক্তিশালী ভাষা। একটা সময় বোধ হয়, ১০টি ভাষার মধ্যে বাংলা দুই-তিনের মধ্যে থাকবে। আমাদের যা কিছু লিখেছি, সব অনুবাদ করে বিশ্বের সামনে আনতে হবে। তার মানে এই নয় নিজের ভাষাকে ভুলে যেতে হবে।’

গৌতম গুহ রায় বলেন, ‘সব চেয়ে জরুরি হচ্ছে প্রাণবন্ত থাকা। মুক্ত কবিতা মানে শেকড়হীন নয়। দিন দিন ভাষা সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে, এটা মননকে আরও পাশাপাশি আনবে।’

অনুষ্ঠানের শেষে কবিতা পাঠ করেন মুহম্মদ নুরুল হুদা, গৌতম গুহ রায় ও আশরাফ জুয়েল।