নারীর নিজের ঘর হয় কি?

নারীর জন্য নিজের একটা ঘর হয় কি? কন্যাসন্তানকে কিশোরী হওয়ার আগেই আলাদা কামরা দিতে আমি ভুলবেন না হয়তো। কিন্তু তাতে আমার ঘর হয় না, বা চার দেয়ালের ঘরই কি নিজের ঘর হয়? নাকি সেই ঘরে সমতা থাকলে তবেই ঘর হয়ে ওঠে। আবার ঘরেরও নাকি রাজনীতি থাকে?

ঢাকা লিট ফেস্ট ২০২৩ এর শেষ দিনে আলোচনার বিষয় ছিলো- নিজের একটি ঘর। বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার রুমে অধ্যাপক ও লেখক সাবিহা হক কথা বলেন তার বই মুঘল এভিয়ারি নিয়ে, কথা বলেন কেন নারীর একটা ঘর প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে নারীর যতটুকু উপস্থিতি, সেখানে তার পরিচয় তাকে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে হাজির করে না। ইতিহাস একটি রাজনৈতিক ইস্যু এবং জটিলও বটে। আর নারীর ইতিহাস দৃশ্যমান না। ইতিহাসে নারী নেই।’  

ফেরদৌস আজিম বলেন, ‘আমরা “তার” রুম বলতে কার রুমের কথা বলছি? ভার্জিনিয়া উলফ নারীর একটি কামরার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেই রুমকে মাথায় নিলে কী দেখতে পাই? যে কথা বলছি তা প্রতাপশালী বা ক্ষমতার যে দৃষ্টি, সেটাকে কীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে? বা আদৌ করে কি?’  

লেখক ডেনিস ডিকেয়ারস নারাইন ঘরের সংজ্ঞা নতুন করে তৈরির কথা বলেন। ক্যারিবিয় সাহিত্যের কথা উঠলে গুটিকয়েক পুরুষ লেখকের নাম শোনা যায়। নারী লেখকরা কোথায়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি বদলেছে। এখন নারী লেখকরা যার যার মতো করে কাজ করছেন। এখন অনেক নারী আছেন যাদের কথা জানা যাচ্ছে।’  

লেখক ঘর বলতে কী বলেছিলেন উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘর বলতে উলফ যেটা বুঝিয়েছিলেন তাহলো নিজের মতো একটা জায়গা। আবার হোটেল ঘরও ঘর। সেখানে আপনি নিজের মতো থাকবেন, প্রেম করবেন আবার যৌনকাজও করবেন। ফলে ঘরের একটা বিস্তারিত সংজ্ঞা দাঁড়িয়ে গেছে।’ 

খাদিজা মাস্তুরের ধারাবাহিক উপন্যাসের একটি হলো আঙ্গন - যা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে, এবং এখন আগ্রহের জায়গা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। দ্য উইমেনস কোর্টইয়ার্ড - ডেইজি রকওয়েলের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন। আলোচনায় ডেইজি বলেন, ‘যখন একটি চরিত্র বের হয়ে যায় তখন পাঠক হিসেবে আমরা পিছু নিই না। আলিয়া যখন শিক্ষকতার ডিগ্রি অর্জনের জন্য এক বছরের জন্য আলিগড় চলে যায়, তখন একটি বাক্য পরে সে উঠানে ফিরে আসে, হাতে ডিগ্রি। পুরুষ আত্মীয়রা আসে-যায়। নারীদের বিষয়ে আলাপটা। নারীর কোনও মতামত নেওয়া হয় না। তারা নারীদের বাদ দিতে চায়, তখন তারা আঙ্গন ছাড়িয়ে বাইরের বসার ঘরে গিয়ে কথা বলে।’

আলোচকরা বলেন, ‘ঘর বা স্পেসের কনসেপ্ট কী হবে তা নিয়ে কথা বলেন। যৌনকর্মী তার এক ঘরে সন্তান মানুষ করে, সেখানেই খদ্দের আসে সেটা ম্যানেজ করে, সেখানে ঘুমায়। কাজের রুম আর তার নিজের সময়ের রুম যখন একটাই তখন? একইভাবে বস্তির নারীর ঘরের কনসেপ্টটা কী হবে?’ 

ফেরদৌস আজিমের উপস্থাপনায় বারবারই ঘর কোনটা সে প্রসঙ্গ উঠে আসে। তিনি বলেন,  ‘নারীর আলাদা একটা ঘর মানে তাকে নিজের জায়গা করে দেওয়া।’

ডেইজি বলেন, ‘দেশভাগ নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। স্নাতকে পড়ার সময়ে আমি অনেক হিন্দি উপন্যাস পড়তে গিয়ে সেটা পেয়েছি। পুরুষ যেকোনো পরিস্থিতিতে মূখ্য। নারীকে বাধার মুখে পড়তে হয়। এমনকি নারীরাও যখন কথা বলে সেই পুরুষই আবার বিষয় হয়ে ওঠে। আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নারীদের বই অনুবাদ করি।’