ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়

গত দুই দিনের হাড়কাঁপানো শীতের প্রভাব আজ রবিবার (৮ জানুয়ারি) কিছুটা কমেছে। কুয়াশার আড়ালের সূর্য আজ রশ্মি ফেলেছে। সেই উষ্ণতা নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভিড় জমিয়েছেন শিল্প ও সাহিত্যপ্রেমীরা। ঢাকা লিট ফেস্টের দশম আসরের শেষ দিন ছিল আজ। এদিন সকাল থেকেই হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল লিট ফেস্টের বিভিন্ন আয়োজন।

হিমেল আবহাওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টায় কীর্তনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনের আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় এই সাহিত্য আসরে যোগ দিয়েছেন পাঁচ মহাদেশের পাঁচ শতাধিক বক্তা, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদ। ১৭৫টির বেশি অধিবেশনের চার দিনের এই আসরের শেষ দিনে সকাল ১০টায় ভবিষ্যতের বিজ্ঞান, ইংরেজি বাংলা সাহিত্যের ধাঁধা নিয়ে ছিল আলোচনা। এছাড়াও সারা দিন শিশুদের নিয়েও ছিল নানা আয়োজন।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

সকাল সোয়া ১১টায় নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুনরাহ মুখোমুখি হন অ্যালেক্সান্দ্রা প্রিংগেলের। বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন গৌতম গুহ রায়, সঙ্গে ছিলেন কবি আশরাফ জুয়েল ও মোহাম্মদ নুরুল হুদা। একই সময়ে শিশুদের বেড়ে ওঠা নিয়ে আলোচনা করেন শৈশবের পরিচালক ফারহানা মান্নান। 

দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘পুরুষত্ব বনাম পুরুষতন্ত্র’ বিষয়ে আলাপে বসেন অভিনয় শিল্পী ইরেশ জাকের, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহিন সুলতান, ব্র্যাক জেন্ডার, জাস্টিজ ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, অভিনয় শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন, তাকবীর হুদা ও আইনজীবী তাসাফফি হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। 

কিশোয়ার চৌধুরী। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

‘ভুল তথ্যের যুগে স্বাস্থ্য’ নিয়ে আলোচনা করেন রেসা লুইস ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। ‘কোন বই পড়তে হবে!– এটি নির্ধারণ করবে কে?’ এ নিয়ে আলোচনা ছিল দুপুর পৌনে ২টায়। একই সময়ে ছিল ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা। খাবার বিষয়ে আলোচনা করেন রান্না বিষয়ক বই লেখক ও শেফ ভ্যালেন্টাইন ওয়ারনার, তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবার। বিকাল সাড়ে ৫টায় নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে পর্দা নামে ঢাকা লিট ফেস্টের দশম আয়োজনের। 

এরপর থাকছে চমক হিসেবে কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্ট। এতে অংশ নিবেন অনিমেষ রায়, পান্থ কানাই, ঋতুরাজ, নন্দিতা, সুনিধি নায়েক, রুবায়াত রেহমান ও বগা তালেব। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ন্যান্সি বলেন, আজ শেষ দিন কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্ট আছে। ডিপার্টমেন্টের সব বন্ধু মিলে কনসার্টে অ্যাটেন্ড করতে এসেছি। আজকেই শেষ দিন, এর আগেও দুদিন এসেছিলাম। লিট ফেস্টে চার দিন খুবই কম সময় মনে হচ্ছে। আরও দুই-একদিন বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো। এই ফেস্টের মতো আনুষঙ্গিক কার্যক্রম আর অন্য কোথাও হয় না। সব মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে অসম্ভব ভালো লাগছে। আগামী বছরের জন্য আবার অপেক্ষায় থাকবো।

তাসনিম জারা। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিব হাসান বলেন, এবারের লিট ফেস্টে আজ দ্বিতীয় দিন এসেছি। অনেকক্ষণ ধরে পুরো ফেস্ট এলাকা ঘুরে দেখলাম। চোখে পড়লো অনেক চেনামুখ।

সন্ধ্যার আগে আগে এই তরুণ বলছিলেন, ‘সব কাজ উপেক্ষা করে আজ দ্বিতীয়বার মূলত কোক স্টুডিওর গান শুনতে এখানে আসা। এখানে আমার সব ফেবারিট গান গাওয়া হয়। শীতের মাঝে কনসার্টের মজাই আলাদা। শুধু গান শুনতে এসেছি তা না, নতুন অনেক বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের বইও সংগ্রহ করেছি।’

পরিবারের সঙ্গে শেষ দিনের লিট ফেস্টে এসেছেন তাহমিনা আক্তার। লিট ফেস্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি লিট ফেস্টের তৃতীয় আসর থেকেই নিয়মিত জয়েন করছি। তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার অবস্থা অনেক ভিন্ন। তখন আসলে বোঝার উপায় ছিল না আসলে এই ঢাকা লিট ফেস্ট কী মেসেজ দিতে চাচ্ছে। কিন্তু এখন সেটা একেবারেই ক্লিয়ার। এখন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ ঢাকা লিট ফেস্ট সম্পর্কে অবগত।’

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

তিনি আরও বলেন, ‘লিট ফেস্টের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপন করার সুযোগ আছে এবং সেটা বিগত কয়েক বছরে বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে। বিদেশিরা এই ফেস্টে এসে বাংলা সাহিত্যের নানান দিক সম্পর্কে জানছে। প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি অতিথি ও শ্রোতাদের পদচারণায় জমজমাট ছিল ফেস্ট। যেটা আসলে অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। আগামীতে লিট ফেস্টে নিয়ে কোনও ধরনের নেতিবাচক কথা শোনা যাবে না এই প্রত্যাশা করি। লিট ফেস্টের জন্য বরাবরের মতো সবসময় শুভকামনা।’

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

ওয়ান ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি জহুরা বিবি বলেন, ‘আমি ঢাকা লিট ফেস্টের ১০টা আসরেই এসেছি। প্রথম আসর থেকেই প্রতিটি আসরে অনেক বেশি মজা হয়েছে। এটা বলা বাহুল্য যে প্রথম দিকের লিট ফেস্ট আর এখন আকাশ পাতাল ব্যবধান। ঢাকা লিট ফেস্ট এখন এত বেশি জনপ্রিয় যে বাংলা একাডেমিতে মানুষের জায়গায় হয় না। লিট ফেস্টে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন এখানে জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। আশা করছি এটা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে হবে।’