‘স্যামন চাষ বন্ধ করা উচিত’

ঢাকা লিট ফেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলা একাডেমির কসমিক টেন্টে বিকেল ৩টায় শেফ, খাদ্য বিষয়ক লেখক ও অ্যাডভেঞ্চারার ভ্যালেন্টিন ওয়ার্নার তার পঞ্চম বই ‘দ্য কনসোলেশন অব ফুড’ নিয়ে কথা বলেন। সঞ্চালক ভূমিকায় তার সাথে ছিলেন আহসান আকবর।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসা ভ্যালেন্টিন ওয়ার্নারের আলোচনা শুরু হয় তার শৈশব নিয়ে। চঞ্চলতা ও দুষ্টুমি ঘেরা শৈশবে তাকে সামলানো বাবা-মার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে একটু গোছানো স্বভাবের করতে রান্না ও মাছ ধরার শখ পালন করতে শুরু করেন। একইসাথে, বাবা ও মার দারুণ রান্নার হাত তাকেও একজন রাঁধুনি হতে অনুপ্রাণিত করেছে।

তিনি স্মৃতিচারণ করেন, ‘মা বিভিন্ন নতুন নতুন উপকরণ খুঁজে রান্না করতে পছন্দ করতেন। কেবল ট্র্যাডিশনে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইতেন না। বাবা সব গাছ-গাছালি সম্পর্কে জানতেন। তিনি মাশরুম খুব ভালো রাঁধতে পারতেন, জানতেন কোথায় কতটুকু চিনি দিতে হয়।’  

ডিপ্লোমেট বাবার ডেইরি ও ফার্ম থাকার সুবাদে, বাড়িতে প্রচুর অতিথি আসার কারণে মজার ছলে ভ্যালেন্টিন রান্না শিখে ফেলেছেন। তার ভাষ্যে, ‘বাড়ির সবাই খাবার ভালোবাসতো, সবসময় খাবার নিয়ে কথা হতো। আমি এর মাঝেই ছিলাম।’ 

ভ্যালেন্টিন এখন মনে করেন রান্নাই তার বর্ণ, রান্নাই তার ভাষা। অ্যালিস্টার-লিটল নামের একজন শেফের অধীনে কাজ করার একটা সময় পর তিনি একটি ক্যাটারিং সার্ভিস খুলে বসেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে তার অ্যালেন, গর্ডন রামসের মতো ব্যক্তিত্বের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। রান্না করার দর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এমন শেফ পছন্দ না যে একই বেলার জন্য ২৪টি ভিন্ন রেসিপি রান্না করতে পারে। আমার এমন শেফ পছন্দ যে প্রকৃতির উপাদান সঠিকভাবে ব্যবহার করে রান্না করতে জানে।’ 

ভ্যালেন্টিন নিজেকে প্রকৃতির শিশু বলে দাবি করেন। অন্য অনেক পরিবেশবাদীদের মতো তিনিও বিশ্বাস করেন মানুষের নিজের প্রয়োজনে প্রকৃতির দেখ-ভাল করা উচিত। কারণ প্রকৃতি ছাড়া আমরা থাকতে না পারলেও প্রকৃতি আমাদের ছাড়া ঠিকই ভালো থাকবে। এক্ষেত্রে তিনি উন্নত বিশ্বের চেয়ে অপেক্ষাকৃত প্রত্যন্ত অঞ্চল বেশি পছন্দ করেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘যেহেতু অভাব আছে, তারা রিসোর্স কম নষ্ট করে। প্রকৃতিতে যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকে।’

স্যামন মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক স্যামন স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো হলেও চাষ করা স্যামন উল্টো ক্ষতিকর। কিন্তু প্রাকৃতিক স্যালন বিপন্ন, তাই বর্তমানে কোনো ধরনের স্যালমন খাওয়াই উচিত নয়। এমনকি স্যামন চাষও বন্ধ করা উচিত।’

এছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাস্থ্যসচেতন হতে চাইলে আজকের শিশুদের খাবার নিয়ে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। তবে তাদের শেখানোর সময় মাথায় রাখা প্রয়োজন ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি কোনও কাজে আসবে না। উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় তাদের সচেতন করতে হবে। সবশেষে লেখক তার বই থেকে একটি চুম্বক অংশ দর্শকদের উদ্দেশ্যে পাঠ করে আলোচনা শেষ করেন।