সরকারের নির্দেশের পরও ক্লাস হচ্ছে না নাইটিঙ্গেলে!

আশুলিয়া নাইটিঙ্গেল মেডিক্যাল কলেজ। ফাইল ছবিসরকারি নির্দেশের পরও ক্লাস শুরু হয়নি আশুলিয়ার নাইটিঙ্গেল মেডিক্যাল কলেজে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সময়মতো ক্লাস শুরু না হওয়ায় তারা বিপদে পড়েছেন। কোর্স শেষ হতে যত সময় লাগবে, ততই দেরিতে শুরু হবে তাদের পেশাগত জীবন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্লাস শুরুতে সময়ক্ষেপণে লাভবান হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। মালিকপক্ষের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালার শর্ত পূরণ না করার অভিযোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আশুলিয়ার নাইটিঙ্গেল মেডিক্যাল কলেজ, রংপুরের নর্দান মেডিক্যাল কলেজ এবং গাজীপুরের সিটি মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর থেকেই মেডিক্যাল কলেজ তিনটির শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে আন্দোলন করে আসছেন। নাইটিঙ্গেল কলেজ শিক্ষার্থীরা ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। পরে তারা কলেজ খুলে দেওয়ার দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন।

গত ১৬ জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মন্ত্রণালয় পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। মানবিক ও জনস্বার্থ বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় কলেজ তিনটির ওপর থেকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। কিন্তু ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ওই তিন কলেজে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তির স্থগিত আদেশ বহাল রাখে। 

কিন্তু গত ১৬ জুন মেডিক্যাল কলেজ তিনটির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও নাইটিঙ্গেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনও ক্লাস শুরু করেনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরপরই আমরা ক্যাম্পাসে উঠেছি, আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছি, কিন্তু তারা কোনও রকম যোগাযোগ করছেন না আমাদের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের জানিয়েছেন, দশজনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তারা বসবেন।

ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, কলেজ বন্ধ ঘোষণা হওয়ার পরই অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তা চলে গেছেন ক্যাম্পাস থেকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরও তারা ক্যাম্পাসে ফিরে আসছেন না। তেমনি আসছেন না শিক্ষকরাও। সবকিছুই এলোমেলো অবস্থায় চলছে। ওই শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান অবস্থায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসা খুব বেশি দরকার। কিন্তু তাদের কোনও খোঁজ নেই। তারা ফোনে আমাদের বলেছেন, তোমরা ক্লাস করো, কিন্তু ক্লাসটা নেবে কে, সেটা বলছেন না। ক্লিনিক্যাল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক এলেও থিউরিটিক্যাল এবং প্যারা থিউরিটিক্যাল শিক্ষকরা একেবারেই আসছেন না।

কেন কর্তৃপক্ষ কলেজ ক্যাম্পাসে আসছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরা বলতে পারছি না। আমাদের সঙ্গে বসার জন্য আবেদনও করেছি। কিন্তু কোনওভাবেই চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা উপব্যবস্থাপনা পরিচালক-কেউ আমাদের সঙ্গে বসতে চাইছেন না।

সাময়িক বন্ধের নির্দেশনায় থাকা অন্য দুই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন, কী করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে ভাবছেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে একেবারেই অন্ধকারে রেখেছেন। 

কলেজে এখনও কিছু অনিয়ম রয়ে গেছে যেগুলো ঠিক না হলে ক্লাস করে কোনও লাভ নেই বলে জানালেন জাকিয়া তাসনীম। তিনি বলেন, এগুলো ঠিক না হলে কয়েকদিন পর আমরা ফের বিপদে পড়বো। তাই এসব অনিয়ম ঠিক করার জন্য আমরা চেয়েছি কর্তৃপক্ষে সঙ্গে বসতে। কিন্তু আমরা তাদের পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে জানতে কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন জামানের দু’টি মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন দু’টি বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিমান কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।

আরও পড়তে পারেন: আড়ালেই থেকে যাচ্ছে ‘ক্রসফায়ারে’র মূল গল্প 

 / এমএসএম/এমএনএইচ/