ওপরের তথ্যগুলো বিস্মিত করার মতো হলেও জিইডি সেন্টার ইনকরপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সুযোগটিই করে দিচ্ছে। তাদের কোর্সটির নাম জেনারেল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, সংক্ষেপে জিইডি কোর্স। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন দিয়েছে এই কোর্সের! যদিও এই প্রতিবেদকের কাছে কোর্সটি চালু থাকা নিয়ে রীতিমতো শঙ্কা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। কোর্সটি অনতিবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, জিইডি সেন্টার নামে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে জিইডি কোর্স সম্পর্কে তথ্য প্রচার করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। জিইডি সেন্টার ইনকরপোরেশনের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রোগ্রামে দুর্বল ও সবল— সবাই ভর্তি হতে পারেন। চাকরিজীবীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে ক্লাস করতে পারবেন। এছাড়া, যারা অল্প সময়ে টার্গেট স্কোর পেতে চান, তাদের জন্যও এই কোর্স কার্যকরী। কোর্সে ভর্তি থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া পর্যন্ত মোট খরচ মাত্র ৪৫ হাজার টাকা।
সোমবার (২২ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে জিইডি সেন্টার ইনকরপোরেশনের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ধানমন্ডি ২৭-এর মীনা বাজারের পেছনে একটি ভবনের নিচ তলায় দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে ক্লাস করছেন এই কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। ছোট আকারের দু’টি রুমে ঠাসাঠাসি করে বসানো হয়েছে চেয়ার, রুমের চারদিকের জানালা বন্ধ। ক্লাস করছেন মাত্র পাঁচ জন শিক্ষার্থী।
এদিকে জিইডি কোর্সের কো-অর্ডিনেটর আল আমীনের কাছে কোর্সটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এই কোর্সটি ২০১০ সালে ইউজিসি অনুমোদন দিয়েছে। এখান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে দেশে-বিদেশে লেখাপড়া ও চাকরি করছেন।’
কখন কিভাবে ভর্তি হওয়া যায়, জানতে চাইলে আল আমীন বলেন, ‘এসএসসি পাশ করার পর যে কেউ ইচ্ছা করলেই ভর্তি হতে পারেন। কেউ ২০ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে থাকলেও আবারও এই কোর্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। আবার কেউ আজ এসএসসি পাস করে আগামীকালই এখানে ভর্তি হয়ে এক মাসের মধ্যে কোর্স শেষ করে পরের মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।’
আল আমীন জানান, কোর্সের শেষ দিকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষাও হয় অনলাইনে। আমেরিকান একটি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা, সার্টিফিকেটও তারাই দেয়।
জানা যায়, ভিয়েতনামে যুদ্ধের কারণে সেখানকার হাজার হাজার মানুষ লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তাদের আবারও পড়ালেখার পথে ফিরিয়ে আনতে কোর্সটি চালু করা হয়। ওই যুদ্ধের সময়ই মূলত কোর্সটি আমেরিকায় চালু হয়। ২০১০ সালে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশে কোর্সটি চালু করে জিইডি সেন্টার।
এদিকে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-পরিচালক জেসমীন পারভীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১০ সালের দিকে ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান এই কোর্সটি অনুমোদন দেন। তখন আমি ছুটিতে ছিলাম। ছুটি থেকে ফিরে এসে কোর্সটির অনুমোদন দেওয়ার কথা জানতে পারি। কিন্তু কোর্সটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একদমই চালু থাকার কথা নয়। কারণ ওরা যেসব বিষয় পড়ায় তা দেশের শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া মাত্র চার মাসের একটি কোর্স কখনই দুই বছরের উচ্চমাধ্যমিক সমমানের হতে পারে না।’
ইউজিসির চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের কাছে কোসর্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি রীতিমতো আতঙ্ক প্রকাশ করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোর্সটি চালু হওয়ার কথা নয়। কারণ এটা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কোসর্টি কিভাবে অনুমোদন পেয়েছে, তা আমার জানা নেই।’ খোঁজ-খবর নিয়ে এই কোর্সটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান আব্দুল মান্নান।
আরও পড়ুন-
এবার এইচএসসির একশ’ উত্তরপত্র মিললো রাবির হলে
প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পাচ্ছেন ১৬ হাজার সহকারী শিক্ষক
/টিআর/