নজরুলের ছড়ার ইংরেজি প্যারোডি: ভাষা বিকৃতির অভিযোগ ইউনিসেফের বিরুদ্ধে

 

ইউনিসেফের পোস্টারবাংলা ভাষার জন্য রক্তদানকারী শহীদদের মর্যাদা দিয়ে বিশ্বব্যাপী যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হচ্ছে, তখনই এই ভাষাকে বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) বিরুদ্ধে। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে ইউনিসেফের তৈরি একটি অনলাইন পোস্টারকে ভাষাবিকৃতি হিসেবে দেখছেন ভাষাবিদরা। তারা বলছেন, এ ধরনের বিকৃতি ইউনিসেফ-এর কাছে আশা করা যায় না। আর প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘ইনফরমাল’ যোগাযোগের জন্য এমনটা করা হয়েছে। এতে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই বলেও দাবি করা হয়েছে।

‘ইউনিসেফ বাংলাদেশ’-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে একটি পোস্টার। আড়মোড়া ভাঙা এক শিশুর ছবিসহ পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘ভোর happen, দোর open।’ এটি তৈরি করা হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ভোর হলো’ ছড়ার প্রথম পঙ্‌ক্তিকে প্যারোডির মাধ্যমে। ছড়াটির প্রথম দুই চরণ,  ‘ভোর হলো দোর খোল খুকুমনি উঠরে/ ঐ ডাকে জুঁই শাখে ফুল খুকি ছোট রে’। কাজী নজরুল ইসলামের এই ছড়া থেকে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে প্যারোডির মাধ্যমে এই পোস্টার তৈরি করাকে ভাষাবিকৃতি হিসেবে দেখছেন ভাষাবিদ, নজরুল গবেষক, অ্যামেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউনিসেফ হয় বাংলায় লিখবে, না হয় ইংরেজিতে। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তৈরি এই পোস্টারকে খিচুড়ি হিসেবে দেখছি। ইউনিসেফের কাছ থেকে আমরা এমনটা আশা করি না।’

বাংলা-ইরেজির মিশ্রণে পঙ্‌ক্তি লেখার বিষয়ে এই নজরুল গবেষক বলেন, ‘এর মাধ্যমে ভাষাবিকৃতির পাশাপাশি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছড়াও বিকৃত করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘বাংলা ভাষা যথেষ্ট সমৃদ্ধ। চাইলেই বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে এ রকম বিকৃত করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে এর চেয়ে সুন্দর শব্দ আছে। শব্দের দীনতা আছে যাদের, যারা পরশব্দকে বাংলাভাষায় আনতে চায়, এই বিষয়টিকে তাদেরই অপপ্রয়াস হিসেবে আমি চিহ্নিত করছি।’

ইউনিসেফের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট এ এম শাকিল ফয়জুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবকিছু হয় ইনফরমাল ওয়েতে। এটা একটা ফান। ইনফরমাল ওয়েতে ইনটারেক্ট করা ছাড়া এটা আর কিছু না।’ শুধু বাংলা বা শুধু ইংরেজিতে করা যেত কিনা, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিফারেন্ট ওয়েতে উপস্থাপন করলে মানুষ আগ্রহ দেখায়, শেয়ার করে। সে কারণেই এমনটা করা হয়েছে।’