গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে সরকারি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থান নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তার সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি শিক্ষকদের অনশন ভাঙাতে হাজির হন শিক্ষামন্ত্রী নিজে। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের বাইরে। তবে যাওয়ার আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্তির বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। আশা করি, আপনারা বিষয়টা বুঝবেন। আপনাদের এমপিওভুক্ত করা হবে।’ তবে তার এই আহ্বানস প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হাজী বিশারদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে একই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। গ্রামের স্কুলে ছেলে-মেয়েরা স্বল্প বেতন কিংবা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু তাতে তো একজন শিক্ষকের কোনও বেতন হয় না। তবু বছরের পর বছর পাঠদান করে যাচ্ছি। ছেলে-মেয়েরা অন্তত শিক্ষাবঞ্চিত না থাকুক; এই লক্ষ্যেই এ কাজ করি। কিন্তু বিনা বেতনে আর কতদিন শিক্ষকতা করতে পারবো, সেটাও অজানা।’
খুলনার তেরখাদা সোনারতরী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা সাগরিকা মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। স্কুলের প্রতি এক প্রকার মায়া জন্মে গেছে বলেই এর সঙ্গে এতদিন থাকা। এতদিন ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছি। আশা ছিল, সরকার আমাদের দেখবে। আশায় আশায় পার হয়ে গেছে অনেক বছর। সরকার এ রকম আশা দিয়ে আমাদের না রাখলেও পারতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস কেউ না দেখলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেখবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু একবার নয় ২২ বার তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর কতবার আশ্বাস দেবে? হিসাব করে দেখা গেছে, ২ হাজার কোটি টাকা হলেও এসব শিক্ষকের কষ্টের দিন অবসান হয়, কিন্তু এই টাকা দেওয়া তো এমন কিছু না। সরকারের ব্যাংকে যে লুটপাট হয়, যেমন সোনালী ব্যাংকে যে ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেলো, তখন অর্থমন্ত্রী বললেন, ৫ হাজার কোটি টাকা তো কিছুই না। এখন শিক্ষকদের এই ২ হাজার কোটি টাকা এত বেশি হয়ে গেলো?’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা মানুষ গড়ার কারিগর, তাদের কেন আজ রাস্তায় নামতে হবে? তাদের দাবি যৌক্তিক। তারা সংগ্রাম করছেন ন্যূনতম জীবন ধারণের তাগিদে। তাদের এমপিওভুক্ত করলে কতই বা বাড়বে? হয়তো দুই থেকে তিন হাজার টাকা। ফলে আমি দাবি করি ওইসব শিক্ষকের বিষয়ে সরকার দ্রুত কোনও সমাধানে আসুক।’
এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমে শহীদ মিনারে সমাবেশ এবং পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন পালন করে ‘নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন’। সমাবেশ থেকে বলা হয়, সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে এই আন্দোলন চলবে। সরকার আবারও এমপিওভুক্তির আশ্বাস দেয়। ওই আশ্বাসের পর কেটে যায় একবছর। এরপর ২০১৬ সালে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবার রাজপথে নামেন শিক্ষকরা। ওই সময় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার আশ্বাস দেয় সরকার। ওই আশ্বাসের পর শিক্ষকরা ২০১৭ সালের জানুয়ারি আবার অবস্থান নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। প্রায় ২৮ দিন অবস্থান করার পর শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ফিরে যান বিদ্যালয়ে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও যখন এমপিও প্রসঙ্গ আসেনি। প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন সংগঠনের নেতারা।
আরও পড়ুন-
আমরণ অনশনে অসুস্থ ৯০, হাসপাতালে ভর্তি ৪
দাবি না মানলে কাল থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, অনশন চালিয়ে যাবেন নন-এমপিও শিক্ষকরা