২০১৫ সালে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর করে সরকার। ওই বেতন স্কেল কার্যকর সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনক্রিমেন্ট বেতনের সঙ্গে যোগ করার কথা বলা হয়। ওই বেতন স্কেল কার্যকরের পর থেকে সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা বৈশাখী ভাতা ও পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা দেওয়া হবে বলা হলেও গত তিন বছরে তা পাননি তারা। পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগই নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈশাখী ভাতা ও পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে অনেকবার বৈঠক করেছি। সবাই ইতিবাচক। তবে বাজেটে বরাদ্দ পাওয়ার ওপর এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে। আমাদের দিক থেকে চেষ্টার ত্রুটি নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বাজেটের বাইরে তো টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।’
স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজুর মন্তব্য— ‘বারবার দাবি করলেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে ২০১৬ সাল থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। এরপর দফায় দফায় আন্দোলন কর্মসূচি দিলেও মন্ত্রণালয়ের কোনও সাড়া পাননি তারা। এমনকি বৈশাখী ভাতা দেওয়া হয়নি ২০১৭ সালেও। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যোগ করার জন্য কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি ফেরাতে বাধ্য হয়ে জাতীয়করণের একদফা দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা।’
স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু মনে করেন, ‘দেশে বেসরকারি শিক্ষকের সংখ্যা ৯৮ শতাংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু দুই শতাংশ সরকারি শিক্ষককে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিয়ে শিক্ষা খাতে বড় বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’
বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র এনামুল ইসলাম মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৫ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৩ জন। এই শিক্ষকদের জন্য সরকার এমপিও (মানি পে-অর্ডার) খাতে বছরে খরচ করে ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে এমপিও খাতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। মাসিক বেতনের ২০ শতাংশ হিসেবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা দিতে হবে ২১৬ কোটি টাকা।