জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা চিঠিতে ৪০টিরও বেশি ভুল!



জেলা-শিক্ষা-কর্মকর্তার-স্বাক্ষর-করা-চিঠি

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে ইংরেজি পড়তে না পারায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠদানকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ছবিকে সাময়িক বরখাস্তের ওই চিঠিতে ৪০টিরও বেশি বানান ভুল পাওয়া গেছে। এছাড়া রয়েছে একাধিক বাক্যও ভুল। আছে সাধু-চলিত রীতির মিশ্রণও। ভুলেভরা ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আকতারুজ্জামান বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণের সময় চতুর্থ শ্রেণির কোনও ছাত্রই সাবলীলভাবে ইংরেজি পড়তে পারেনি। তাই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
চিঠিতে এত ভুল থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘যিনি চিঠি লিখেছেন, তিনি ভুল করেছেন। আমার জানা ছিল না, তিনি বানান জানেন না। তবে, পরে বানান ঠিক করে নতুন করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।’

চিঠিতে ‘শ্রেণি’ শব্দটির বানান লেখা হয়েছে ‘শ্রেণী’, ‘ইংরেজি’কে লেখা হয়েছে ‘ইংরেজী, ‘পড়তে পারাকে’ লেখা হয়েছে ‘রিডিং পড়তে পারা’, ‘কোনও’ শব্দটিকে লেখা হয়েছে ‘কোন’ বানানে। ‘পড়তে পারেনি’ শব্দযুগলকে ‘পড়তে পারে নাই’, ‘এছাড়া’ শব্দের বানান লেখা হয়েছে ‘তাছাড়া’, ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত’ শব্দকে ‘প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত’, ‘সত্ত্বেও’ শব্দের বানান ‘সত্তেও’, ‘রূপ’ শব্দের বানান লেখা হয়েছে ‘রুপ’, ‘অবহেলাজনিত’ শব্দযুগলকে ‘অবহেলা জনিত’, ‘আপিল’ শব্দের বানান ‘আপীল’, ‘হলো’ শব্দের বানান ‘হল’ লেখা হয়েছে। এছাড়া শব্দের মাঝখানের ‘একার’ শব্দের শুরুতে ব্যবহার করা হয়েছে। আছে ‘যেহেতু’, ‘বিধায়’ ‘সত্ত্বেও’ শব্দের মতো সাধুরীতির শব্দও। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের একটি অধ্যায়ের নামও ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের Sagar’s week অধ্যায়টিকে লেখা হয়েছে Sagar’s week chapter।

এছাড়া, রয়েছে ৪৭ শব্দের একটি দীর্ঘ ও জটিল অশুদ্ধ বাক্য। বাক্যটিতে রয়েছে সাধুরীতি ও চলিতরীতির মিশ্রণও। বাক্যটি হলো, ‘যেহেতু আপনার এরুপ কার্যকলাপ সরকারি দায়-দায়িত্ব পালনে অবহেলা জনিত অসাদাচরণের সামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিধায় আপনাকে সরকারি কর্মচারী শৃংখলা ও আপীল বিধি ২০১৮ এর ২(আ) এবং ৩(খ) অনুযায়ী কর্তব্য অবহেলা জনিত অসাদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করা হল এবং একই বিধিমালার ১২এর উপবিধি(১) মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হল।’

ভুলেভরা চিঠিটির একটি অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো—‘চতুর্থ শ্রেণীর ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং গত ৩০/০৭/২০১৯ খ্রি. তারিখে ৪র্থ শ্রেণীর ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে রিডিং পড়তে পারে কিনা বিষয়টি পর্যবেক্ষণকালে কোন শিক্ষার্থী তাদের পাঠ্য বইয়ের Sagar’s week chapter থেকে সাবলীলভাবে পড়তে পারে নাই। তাছাড়াও আপনি আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হওয়া সত্তেও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণী পাঠদান করেন না। যেহেতু আপনার এরুপ কার্যকলাপ সরকারি দায়-দায়িত্ব পালনে অবহেলা জনিত অসাদাচরণের সামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিধায় আপনাকে সরকারি কর্মচারী শৃংখলা ও আপীল বিধি ২০১৮ এর ২(আ) এবং ৩(খ) অনুযায়ী কর্তব্য অবহেলা জনিত অসাদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করা হল এবং একই বিধিমালার ১২এর উপবিধি(১) মোতাবেক সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যখন স্বাক্ষর করেছেন তখন কি পড়ে দেখেননি? শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে ইংরেজি বিষয় পড়তে না পারার কারণে যদি শিক্ষকের অবহেলাজনিত অপরাধ হয়, তাহলে চিঠি ভালোমতো না পড়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তো একই অপরাধ করেছেন বলেও তারা মনে করেন।