বেতারে প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ঈদের পর

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বাংলাদেশ বেতারসহ কমিউনিটি রেডিওতে যুক্ত হচ্ছে ঈদের পর আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে। করোনার প্রভাবে ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীসহ সব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্ বলেন, ‘রেকর্ডিং শুরু হয়েছে। ঈদের পর অফিস খুললেই একটা দিন নির্ধারণ করে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মহাপরিচালক।

মো. ফসিউল্লাহ্ জানান, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রথম রেডিওতে যুক্ত হচ্ছে প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবগত হবেন। তারপর শুরু হবে।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অভিভাবকদের মোবাইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি ক্লাসের শেষে বিষয় কোট সেন্ড করতে হবে অভিভাবকদের। এই ব্যবস্থায় জানা যাবে কতজন শিক্ষার্থী বেতারের ক্লাসে অংশ নিয়েছে। জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘শিক্ষার্থীর তথ্য সংরক্ষণে সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। ’

শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ফসিউল্লাহ্ বলেন, ‘এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে জরিপ আমরা করেছি, তাতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশের বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে। এমনও বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে যেখানে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী নেই। ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশের বাড়িতে গিয়ে টেলিভিশনে অংশ নিচ্ছে। গড়ে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে। মোবাইল ফোনের জরিপে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার শিক্ষার্থী জরিপ করে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কন্টাক্ট করা সম্ভব হবে। এই জরিপ সম্পন্ন হলে আমরা আপনাদের জানিয়ে দেবো। ’

মহাপরিচালক জানান, বেতারের কনটেন্ট অনেক উন্নত করা হয়েছে। বেতারের সহায়তায় কম টাকায় পর্যাপ্ত কনটেন্ট রেডি করা যাচ্ছে। ইউনেস্কোর সহায়তা দিচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সময় ও বিশেষজ্ঞদের সম্মানী দেওয়ার জন্য কিছু টাকা লাগবে। শিক্ষকদের সম্মানী বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার শিক্ষকরা পাবেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। আর ঢাকার বাইরে থেকে এলে পাবেন সাড়ে চার হাজার টাকা। বেতারে গিয়ে রেকর্ডিং করতে হবে শিক্ষকদের। একদিনে একজন শিক্ষককে দিয়ে দুই থেকে তিনটি কনটেন্ট করা হবে। যদি দূর থেকে শিক্ষক আনা হয় সে ক্ষেত্রে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সেটা পরে করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দফায় দফায় এই ছুটি বাড়িয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ‘ঘরে বসে শিখি’ শীর্ষক শ্রেণি কার্যক্রম চলছে গত ৭ এপ্রিল থেকে। এই শ্রেণি কার্যক্রম ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা বাতায়নে আপলোড করা হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রমের ভিডিও। পাশাপাশি ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে নতুন একটি ওয়েব পোর্টালও তৈরি হচ্ছে স্থায়ীভাবে, যা করোনা পরবর্তীতেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে পরিচালিত হবে।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বেতার বার্তায় প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর আগেই প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে কাজ করবেন। প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক অভিভাবকদের সচেতন করবেন বিভিন্ন মাধ্যমে।