চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত ৪২২ শ্রমিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বেসরকারি পর্যবেক্ষণ সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ৩৭৩টি কর্মস্থল-সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আগের বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন ২০২৪) দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪২০টি এবং মৃত্যু হয়েছিল ৪৭৫ জন শ্রমিকের।
সর্বাধিক মৃত্যু পরিবহন খাতে
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি ২০৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সেবামূলক খাতে ৬৫ জন, কৃষি ও নির্মাণ খাতে ৫৯ জন করে এবং কল-কারখানা ও উৎপাদন খাতে ৩২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন।
মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ
প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬৭ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন, বজ্রপাতে ৫৬ জন, ভবনের ওপর থেকে পড়ে ২৩ জন, ভারী বস্তুর আঘাতে ৯ জন, বিষাক্ত গ্যাসে ১ জন, পানিতে ডুবে ৫ জন, আগুন ও বিস্ফোরণে ১২ জন এবং মাটি বা দেয়াল ধসে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে আরও ১ জনের।
কাঠামোগত দুর্বলতা ও গাফিলতি
এসআরএস মনে করে, এসব প্রাণহানির পেছনে রয়েছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কারিগরি ত্রুটি, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চালনা, নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব, প্রশিক্ষণের ঘাটতি এবং মালিকপক্ষের গাফিলতি। এ ছাড়া অতিরিক্ত কাজের চাপ, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব এবং দুর্ঘটনার পর জরুরি চিকিৎসার অভাবও মৃত্যু বাড়িয়ে দিয়েছে।
ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, “নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে খাতভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রথম দায়িত্ব মালিকের, যিনি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ ও ব্যবহারে গুরুত্ব দেবেন। সরকারের দায়িত্ব হলো নিরাপত্তা বিধান প্রণয়ন ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নে তদারকি নিশ্চিত করা। অন্যদিকে, শ্রমিকদের দায়িত্ব মালিকের দেওয়া নির্দেশনা ও নিরাপত্তাবিধি মেনে চলা।
এসআরএস মনে করে, এই ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়।