নীতিমালা সংশোধন চলতি মাসেই, এরপর এমপিওভুক্তি

এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন (ফাইল ছবি)

২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন সম্পন্ন হচ্ছে এ মাসের মধ্যেই। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। অনলাইনে আবেদন নিয়ে তা যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মমিনুর রশিদ আমিন বলেন, ‘এ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা।’
নীতিমালা সংশোধনের আগে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংশোধনের আগে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই।’  নীতিমালা সংশোধনের কতদিন পর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি শুরু হতে পারে জানতে চাইলে মমিনুর রশিদ আমিন বলেন, ‘ সেটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।’

এর আগে গত ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে।  বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিও দিতে গ্রামাঞ্চলের জন্য শর্ত শিথিল করা হবে।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোপলিটন সিটি, জেলা শহর, উপজেলা এবং গ্রাম পর্যায়ের আলাদা শর্ত থাকবে। গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ পিছিয়ে পড়া এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য শর্ত শিথিল করা হবে। আগে এমপিওভুক্তিতে সবার জন্য একই শর্ত ছিল। 

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর ২৩ অক্টোবর একযোগে দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ওই বছরের ১২ নভেম্বর ছয়টি এবং ১৪ নভেম্বর একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। নতুন এমপিও পাওয়া এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ এখনও চলছে।

বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী চার শর্ত

‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির চারটি শর্তের প্রতিটির মান ২৫ নম্বর। এই ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। নীতিমালার ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এমপিও পেতে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি থাকার জন্য নম্বর ২৫। অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর এবং ১০ বা এর চেয়ে বেশি বছর হলে পাবে পূর্ণ ২৫ নম্বর।

শিক্ষার্থী সংখ্যার জন্য রয়েছে ২৫ নম্বর। কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান পাবে ১৫ নম্বর এবং এর পরবর্তী ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য পাবে ৫ নম্বর করে।

পরীক্ষার্থীর সংখ্যায়ও রয়েছে ২৫ নম্বর। কাম্যসংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য ১৫ নম্বর, কাম্যসংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাবে ৫ নম্বর করে।

পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরিসংখ্যানেও স্বীকৃত পাওয়ার নম্বর ২৫। এরমধ্যে কাম্যহার অর্জনের ক্ষেত্রে ১৫ নম্বর, পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশের জন্য পাবে ৫ নম্বর।

এই নীতি অনুসরণ করে ২০১৯ সালে ২ হাজার ৭৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি হয়। এরমধ্যে দু-একটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে বিভিন্ন সমস্যার কারণে।

নতুন নীতিমালায় শর্ত শিথিলের প্রস্তাব

সংশোধিত নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন এলাকায় বিভক্ত করা হয়েছে। যথাক্রমে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও মফস্বল এলাকা। নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম) প্রতিটি শ্রেণিতে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হবে। একটি শ্রেণিতে ৮০ জন শিক্ষার্থী হলে নতুন শাখা খুলতে পারবে। মাধ্যমিক স্তরে প্রতি শ্রেণিতে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকার উচ্চমাধ্যমিক স্তরে তথা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার প্রতি বিভাগে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। একই স্তরের মফস্বল এলাকায় প্রতি শ্রেণিতে ৪০ জন করে মোট ৮০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পাবলিক পরীক্ষায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে হবে। মফস্বল এলাকার বিজ্ঞান বিভাগে প্রতি শ্রেণিতে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হবে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ, পৌর এলাকায় ৬০ ও মফস্বল এলাকার প্রতিষ্ঠানে ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশ, পৌর এলাকায় ৬০ ও মফস্বল এলাকার প্রতিষ্ঠানে ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে হবে। আর ডিগ্রি স্তরে সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫৫ শতাংশ, পৌর এলাকায় ৫০ শতাংশ ও মফস্বল এলাকায় ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে হবে। ভাড়া বাসাবাড়িতে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না।

বর্তমানে দেশে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নতুন এমপিও পেয়েছে ২ হাজার ৭৩৭টি। এছাড়া অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আর ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে এক লাখের বেশি।