পাঠ্যবই ছাপার দরপত্রে ‘সিন্ডিকেট’

বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কাজে সরকার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অস্বাভাবিক দর নির্ধারণ করে দরপত্রে অংশ নিয়েছে বেশিরভাগ মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করে সরকারি অর্থ বাড়তি খরচ করাতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এই দর নির্ধারণ করে দরপত্র দাখিল করে। আর তা সামাল দিয়ে সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘দরপত্র মূল্যায়নের আগে আমার কিছু বলা উচিৎ নয়। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটি ব্যবস্থা নেবে।’

এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা সরকারের অর্থ সাশ্রয়ে যা করার প্রয়োজন তাই করবো। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করলে প্রয়োজেনে রি-টেন্ডার হবে।’

এনসিটিবি জানায়, বৃহস্পতিবার (৩ জুন) মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী চার রঙে ছাপার জন্য এনসিটিবি প্রাক্কলিত প্রতি ফর্মার দর ২ টাকা ২০ পয়সা। আর এক রঙে ছাপার জন্য প্রতি ফর্মা প্রাক্কলিত দর ১ টাকা ৫৭ পয়সা।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দরপত্র উন্মুক্ত করার পর এনসিটিবি জানায়, ৯৮টি লটে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘সিন্ডিকেট’ করে চার রঙে ছাপার জন্য ২ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯৬ পয়সা দরে দরপত্র দাখিল করেছে। আর এক রঙে ছাপার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠান ১ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ১ টাকা ৯১ পয়সা দরে দরপত্র দাখিল করে।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযোগে বলেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এক হয়ে ‘সিন্ডিকেট’ করে দর নির্ধারণ করে দরপত্র দাখিল করেছে। যা অস্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক দরে দরপত্র দাখিল করলেও ‘সিন্ডিকেট’ থেকে বেরিয়ে প্রাক্কলিত দরের কাছাকাছি বিভিন্ন দরে দরপত্র দাখিল করেছে কয়েকটি মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে— অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস, কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, করতোয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, বারোতোপা প্রিন্টিং প্রেস, সৃষ্টি প্রিন্টার্স, লেটার অ্যান্ড কালার প্রিন্টিং প্রেস।

লেটার অ্যান্ড কালার প্রেসের মালিক শেখ সিরাজ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারকে সহায়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে সর্বোচ্চ দরে দরপত্র দাখিল করেছি।

অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মো. রুবেল বলেন, আমরা বেশি লাভ করতে চাইনি। তাই ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে সরকারি রেটের কাছাকাছি রেটে দরপত্র দাখিল করেছিলাম। দরপত্র উন্মুক্ত করার পর দেখা গেছে— কয়েকজন সরকার প্রাক্কলিত দরের কাছাকাছি রেটে দরপত্র আহ্বান করলেও বেশিরভাগই অস্বাভাবিক দরে দরপত্র দাখিল করেছেন। অনেকের ইচ্ছা থাকলেও ‘সিন্ডিকেট’ থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। আগের দুটি টেন্ডারেও অনেকে সাহস করেনি। তবে এবার কয়েকজন দরপত্র দাখিল করেছেন।

এর আগে গত ৩১ মে প্রাথমিকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা কাজের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। আর গত ২ জুন প্রাক-প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অস্বাভাবিক দর দিয়ে দরপত্র দাখিল করেছে।