X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা পাঠ্যক্রম নিয়ে অপপ্রচার বন্ধের দাবিতে গোলটেবিল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৪১আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৪১

‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। শিশু-কিশোরদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং বিশ্বায়নের এই যুগে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের দুঃখ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে প্রস্তুত করা। কিন্তু এই পাঠ্যবইয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের বিরুদ্ধে একটি সাম্প্রদাযয়িক, প্রতিক্রিয়াশীল, নারী-পুরুষের সমতাবিরোধী মহল ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।’

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক,  মানবিক ও সমতাভিত্তিক, শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ক অপপ্রচার বন্ধ হোক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। এ সময় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘জামায়াত, হেফাজত বা মৌলবাদীরা যখন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে তাণ্ডব করছে, আমাদেরও কি রাস্তায় নেমে তাণ্ডব করতে হবে? সরকার তো আমাদের। সরকার চায় ওরা একটা মানববন্ধন করছে, এখন আমরা কেন ওদের পাল্টাটা করছি না। এখানে সরকারের দায়িত্বটা কি রেফারিগিরি করা?’

শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘২০১৩ সালে হেফাজত যে তাণ্ডব করেছিল ঢাকায়, আমরা একটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলাম। লাখ লাখ মানুষ এসেছে, তোপের মুখে উড়ে গিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ, নির্মূল কমিটি সব উড়ে গিয়েছে। সরকার সেটা বাধা দেয়নি। সরকার পারমিশন দিয়েছিল তাদের ঢাকা আসার জন্য। সরকারের অবস্থা হয়েছে ‘সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো’ এ রকম। দুটো বই তারা প্রত্যাহার করেছে এবং পরশু দেখলাম হেফাজত প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। কিছু লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। তারা বলছে, তাদের (মৌলবাদীদের) বিশাল বিজয় এবং সরকারের পশ্চাদপসরণ হয়েছে। এবং উদাহরণ দিয়ে তারা বলেছে, হাইকোর্টের সামনে সেই ভাস্কর্য থেকে আন্দোলন শুরু করে তারা তাদের ইসলাম কায়েম করবে।’

আফগানিস্তানের কথা তুলে শাহরিয়ার বলেন, ‘আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের আগে অত্যন্ত আধুনিক একটা সরকার এবং একটা দল ক্ষমতায় ছিল। নাজিবুল্লাহর দল, কমিউনিস্ট পার্টি। সেই নাজিবুল্লাহ মোল্লাদের সঙ্গে আপস করতে করতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে ফেলল ১৯৯০ সালে। কিন্তু তখন সংবিধানে সমাজতন্ত্র ছিল। নাজিবুল্লাহই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করল, তালেবান কিন্তু করেনি। কিন্তু সেই নাজিবুল্লাহ কি বাঁচতে পেরেছিল? তালেবানরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। একই অবস্থা পাকিস্তানের। জিয়াউল হক পাকিস্তানে ইতিহাস বন্ধ করে দিয়েছে। এতে পাকিস্তান কোন অধঃপতনে গিয়েছে দেখতে পাচ্ছেন। জিয়াউল হক কি নিজে বাঁচতে পেরেছিল?’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার করে বলেছিলেন ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়। রাষ্ট্র রাজনীতি এসব ধর্ম থেকে আলাদা থাকবে। আপনি বিজ্ঞানকে ধর্ম দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন, ইতিহাস পাঠের মধ্যে ধর্ম নিয়ে আসবেন, কেন ধর্মকে এখানে আধিপত্য দিতে হবে? আমাদের কারিকুলামের মধ্যে যদি এই প্রাধান্যটা হয়, আমি ধর্ম নয় অন্ধত্বের কথা বলছি। এই অন্ধত্বকে যদি আমরা প্রশ্রয় দিই, তাহলে গোটা জাতি অন্ধ হয়ে যাবে।’

রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘আমরা দেশটাকে কীভাবে পুরোপুরি উল্টো দিকে নিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ধর্মভীরু ধর্মান্ধ না। কারা তাদের এদিকে নিয়ে গেল? আমরা তো ২০১০ সালে ভালো একটা প্রাগ্রসর শিক্ষানীতি করেছিলাম। সেটাও তো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির দোসর তাদের উত্তরসূরিরা যারা বলে যে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গিয়েছিল, যারা নীলা নাগের বাড়ি দখল করে বসে আছে, তারাই তো। তাদের আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই, কী জন্য দিই? তারা আজ আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে কি নিয়ে প্রশ্ন করছে। নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন করছি এদের কাছে নতজানু হওয়ার প্রয়োজন ছিল কি না?’

সভায় সামাজিক কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ট্রাস্টি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মফিদুল হক, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর প্রমুখ।

/এএজে/এনএআর/
সম্পর্কিত
দ্রুতই সংশোধন হচ্ছে পাঠ্যবই
শিক্ষাক্রম নিয়ে পানি ঘোলা করছে উগ্রবাদী গোষ্ঠী: রাশেদা কে চৌধুরী
‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন
সর্বশেষ খবর
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়