বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর কর প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

দেশের ৫ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যয়ও বৃদ্ধি রোধ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রুগ্ন পরিস্থিতির মুখে ঠেলে না দিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।  সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।

শনিবার (৩ জুলাই) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।  

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রুগ্ন হয়ে পড়বে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন যেমন বাধাগ্রস্ত হবে তেমনি করের চাপে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। ’

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা পাচ্ছের বলে জানানো হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার সকল স্তরে সরকার বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি ও অর্থ সহায়তার দিয়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনও প্রকার সরকারি বরাদ্দ বা অনুদান পায় না।  শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শিক্ষা সামগ্রী ও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি কেনা, জমি কেনা এবং ক্যাম্পাস নির্মাণ সামগ্রীর ওপর সরকারি ভ্যাট ও কর হিসেবে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করা হয়।

করোনাকালে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন আর্থিক প্রণোদনা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তার জন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানিয়ে আসছে, সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে প্রতীয়মান। যা সরকারের উচ্চশিক্ষা প্রসারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় এর আগে ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা রহিত করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালের এসআরও এর মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর ধার্য করা হলে মহামান্য হাইকোর্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে ট্রাস্ট আইনে পরিচালিত অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর একই আওতায় সমভাবে আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত আয় থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ, ল্যাব-লাইব্রেরির উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা কার্যক্রম ইত্যাদি পরিচালনা করতে হয়।  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উদ্ভূত আয় থেকে কোন প্রকার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রুগ্ন হয়ে পড়বে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন যেমন বাধাগ্রস্ত হবে তেমনি করের চাপে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে।

বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীর কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে দেশে থেকে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরির বিবেচনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ ও দাবি জানান শেখ কবির হোসেন।