বাদ পড়েছেন ১৫ হাজার শিক্ষক নিবন্ধনধারী

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশে বাদ পড়েছে ১৫ হাজার ৩২৫ প্রার্থী। এর মধ্যে নারী কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ৬ হাজার ৭৭৭ জন এবং আবেদন না পাওয়ায় ৮ হাজার ৪৪৮ জনকে সুপারিশ করা হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, আবেদন বাছাই ও সুপারিশের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে।  আর সে কারণে প্রাথমিক সুপারিশের ম্যাসেজ পাঠানো হয়নি।  এই জটিলতার কারণে নারী কোটাও সংরক্ষণ করা যায়নি। এভাবে বার বার প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৫১ হাজার ৭৬১ শিক্ষক নিয়োগের জন্য ফল প্রকাশ করা হয়েছে গত ১৫ জুলাই রাতে। ফল প্রকাশের পর টেলিটকের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মেধাতালিকার ভিত্তিতে ৩৮ হাজার ২৮৬টি পদের বিপরীতে প্রার্থীদের ম্যাসেজ পাঠিয়ে ফলাফল নিশ্চিত করা হয়েছে।  সুপারিশ করা যায়নি ১৫ হাজার ৩২৫ প্রার্থীকে।

প্রার্থীদের আবেদন হারিয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল।’

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, ‘নারী কোটায় প্রার্থী না পাওয়া এবং আবেদন খুঁজে না পাওয়ায় প্রার্থীদের সুপারিশ করা যায়নি বলে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে এনটিআরসিএ।  পরবর্তীতে এসকল পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।’

এনটিএরসিএ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানায়, বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলে নিয়োগের সুপারিশের জন্য গত ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে এমপিও পদ ছিল ৪৮ হাজার ১৯৯ এবং নন-এমপিও পদ ছিল ৬ হাজার ১০৫টি।  মোট পদ ৫২ হাজার ৯৭টি।  আদালতের আদেশ অনুযায়ী সংরক্ষিত পদ ২ হাজার ২০৭টি মোট সর্বমোট ৫৪ হাজার ৪০৪টি পদ।

এনটিআরসিএ জানায় ভুল চাহিদা, পদ না থাকা ইত্যাদি কারণে নিয়মিত শূন্যপদ পদ দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৭৬১টি এবং সংরক্ষিত ১৭৫০টি। গত ১৫ জুলাই টেলিটকের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে চয়েস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  এবং মেধা তালিকার ভিত্তিতে ফলাফল দিয়ে প্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট এসএমএস পাঠানো হয়েছে। এতে মোট ৩৮ হাজার ২৮৬টি পদের ফলাফল এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়। এর মধ্যে মধ্যে এমপিও পদ ৩৪ হাজার ৬১০টি এবং  নন-এমপি পদ ৩ হাজার ৬৭৬টি।  আর ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনও আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি নারী কোটা পদে প্রার্থী না পাওয়ায় মোট ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এসকল পদে পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

এনটিআরসিএ আরও জানায়, নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রাথমিক নির্বাচনের এসএমএস দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর তাদের নিয়োগ সুপারিশ পাঠানো হবে মর্মে আরেকটি এসএমএস দেওয়া হবে।

মেধা তালিকায় থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী বলেন, ‘আবেদন না থাকলে কিভাবে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়েছে? সাবজেক্ট অনুযায়ী বাছাই করা সমস্যা হতে পারে। প্রায় প্রার্থীই ১০ থেকে ২০টি কলেজে আবেদন করেছেন। প্রতিটি কলেজে আবেদন করতে আলাদা আলাদা খরচ গুণতে হয়েছে প্রার্থীদের।  এই ভুল ও জটিল প্রক্রিয়ার কারণে মেধা তালিকায় ওপরে থাকার কারণেও অনেকে পছন্দের কলেজে সুপারিশ পাননি। আবার মেধা তালিকায় নিচের দিকে থাকা প্রার্থী সুপারিশ পেয়েছেন।  হঠকারী সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে এনটিআরসিএ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে আরেক প্রার্থী বলেন, ‘সাবজেক্ট অনুযায়ী একটি মাত্র আবেদন নিয়ে নির্দিষ্ট একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সুপারিশ করা যেতো। সব আবেদনকারীর জেলা ও উপজেলার ঠিকানা আবেদনেই থাকে। তাই পছন্দ ও কাছাকাছি ঠিকানায় কোনও প্রতিষ্ঠানের জন্য সুপারিশ করতে কোনও সমস্যা হতো না। তা না করে বেশি আবেদন করিয়ে ব্যবসা করছে এনটিআরসিএ। আর এ কারণে অনেকে সুপারিশ না পেয়ে চাকরির বয়স হারাচ্ছেন। প্রার্থীরা বার বার মামলা করছেন।  এই অবস্থা বন্ধ করে সহজে সুপারিশ করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।’