ভিকারুননিসার উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির সরেজমিন তদন্তে ইইডি

ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ এবং ঠিকাদারী কাজের বিল পরিশোধ না করার অভিযোগের পর এবার রাজধানীর ঐত্যিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতির সরেজমিন তদন্ত করতে সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা আগেরগুলোর তদন্ত চলার পাশাপাশি এই অভিযোগেরও তদন্ত চলবে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির মাধ্যমিক শাখার সদস্য (অভিভাবক প্রতিনিধি) সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করলেও বিল কাজের বিল-ভাউচার জমা দিচ্ছেন না। গত ৮ এপ্রিল ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বিল-ভাউচার জমা দিতে সিদ্দিকী নাসির উদ্দিনকে চিঠি দেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আপনি প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিভিন্ন কিস্তিতে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আজ অবধি ওই টাকার বি-ভাউচার সমন্বয় করেননি। তারপরও বিল-ভাউচারের টাকা জমা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

শেষ পর্যন্ত গত ১৭ মে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে (ইইডি) অভিযোগ করে অধ্যক্ষ। এরপর ৩০ জুন ইইডি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ইইডির সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠন করা কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম। সরেজমিন তদন্ত করে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, ‘বিল-ভাউচার এখনও সমন্বয় করেননি সংশ্লিষ্ট সদস্য। উল্টো আমাকে বলেছেন, আমি নাকি বিল-ভাউচার চাইতে পারি না।‘

এদিকে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভর্তিসহ কলেজের যাবতীয় কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ, ভর্তি বাণিজ্য ও কলেজের উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজে আর্থিক অনিয়মের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বর্ডির সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

গত ১৮ জুলাই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সরেজমিন তদন্ত করে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে এনএইচ-কেটিএ (জেভি) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজের বসুন্ধরা শাখার ভবন সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করিয়ে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫৮ টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে (ইইডি) অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি। ইইডি সরেজমিন তদন্ত করে বিল পরিশোধের সুপারিশ করে। তারপরও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডি টাকা পরিশোধ করে না। বাধ্য হয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইনি নোটিশ পাঠায়। আইনি নোটিশের পর গত ২০২০ সালের ১৪ মার্চ গভর্নিং বডির পঞ্চম সভায় টাকা পরিশোধের সুপারিশ করা হয়। ওই বছরের ১১ জুন ১৪ মার্চের রেজুলেশন অনুমোদন দেওয়া হয়। এতো কিছুর পরও বর্তমান কমিটির সদস্যদের একাংশ বিল পরিশোধে বাধা দেন। কমিটির অসযোগিতার কারণে বিল পায়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জানান, ঠিকাদারী কাজের বিল পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে কমিটির সদস্যদের একাংশের বিরুদ্ধে। অর্থ উপার্জনে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি হাউজ অ্যান্ড ডেকোরেটরকে দিয়ে ঈদের আগে কলেজ ক্যাম্পাসে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হয়েছিল কমিটির কয়েকজন সদস্যের সহযোগিতায়। পরে হাট উঠিয়ে দেওয়া হয়।