স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করছেন না অভিভাবকরা

সরকারি নির্দেশনা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে না রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কাই করছেন অভিভাবকরা। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকাল পৌনে ৮টার সময় রাজধানীর সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেটে দেখা গেছে, শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা জটলা পাকিয়ে গল্প করছেন। তাদের অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। অনেক অভিভাবক ও শিশুর মুখে মাস্ক পরা থাকলেও তা থুতনির নিচে ঝুলছে। শিশুদের স্কুলের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে গেটের বাইরে বসে  জটলা পাকিয়ে অভিভাবকদের গল্প করতে দেখা গেছে।  রাজধানীর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই চিত্র দেখা গেছে। তবে কোথাও কোথাও ভিন্ন চিত্রও রয়েছে।

অভিভাবকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন। আবার অনেক অভিভাবক কথা না বলে চুপ করে থাকছেন, তারা নাম প্রকাশ করতেও চাচ্ছেন না। তবে অনেক অভিভাবক সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তারা  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের নিয়ে আসতেও শঙ্কাও প্রকাশ করছেন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সামাল দিতেই শিক্ষকরা ব্যস্ত। গেটের বাইরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিএনসিসির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি। গেটের কাছ থেকে জটলা সরিয়ে দিলেও অভিভাবকরা একটু ধূরে গিয়ে আবারও জটলা পাকাচ্ছেন।’

তিনি বলেন,  ‘অভিভাবকদের সচেতন করতে সরকারি নির্দেশনা মতো আমরা কাজ করছি। কিন্তু সচেতন মানুষরা যদি এভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, জটলা পাকাতে থাকেন, তাহলে কিছু করার থাককে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

.

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুন নাহার লিপি বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের সচেতন করে যাচ্ছি। গেটের বাইরে আমাদের লোক রয়েছে। তারাই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও অভিভাবকরা এমনটি করলে কীভাবে চলবে?’

অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জারি করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবককের জন্য করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। শিক্ষকরা অভিভাবকদের সচেতন করছেন। এরপরও অভিভাবকরা যদি তা মেনে না চলেন, তাহলে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বার বার অভিভাবকদের সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। আশা করছি, অভিভাবকরা বিষয়টি অনুধাবন করবেন।’

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিন আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশে জটলা না করে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তাদের সচেতন থাকার অনুরোধ জানান। অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি তদারকি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের তদারকি করার আহ্বান জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, সংক্রমণ বেড়ে গেলে শিক্ষা প্রাতষ্ঠানের শ্রেণিপাঠদান থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়া হবে। সংক্রমণ বাড়লে আবার বন্ধ করা হবে শিক্ষা প্রাতষ্ঠান।