‘অধিদফতরের সম্মতি ছাড়া বিদ্যালয় বন্ধ নয়’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের কারও করোনা শনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আইসোলেশনে যাবেন। তাদের বিদ্যালয়ে আসতে হবে না। ছুটিও নিতে হবে না। জরুরি পরিস্থিতি দেখা না দিলে পুরো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনও শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করা যাবে না। গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলা ট্রিবিউন: দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম: আমরা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) পাঠিয়েছি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিদ্যালয় রি-ওপেনিং প্ল্যান ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এটি তৈরি করা হয়েছে। এসওপি অনুযায়ী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কারও করোনা শনাক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আইসোলেশনে যাবেন। লক্ষণ থাকলেও নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে আসতে হবে না, ছুটিও নিতে হবে না।

আবার শিক্ষকদের কড়াকড়িভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন কেউ ফাঁকি না দেন। করোনার অজুহাতে ফাঁকি দেওয়া চলবে না। করোনা হলে সেটার রিপোর্টও তাকে দিতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: কী পরিমাণ সংক্রমণ দেখা দিলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হবে?

আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম: কোনও ক্লাসের চার, পাঁচ, ছয় বা এর কাছাকাছি সংখ্যক শিক্ষার্থীর লক্ষণ দেখা দিলে তারা কোয়ারেন্টিনে যাবে। জরুরি ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে জেলা করোনা বিষয়ক কমিটি বা উপজেলা কমিটি সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে আমাদের (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের) সম্মতি নিয়ে বিদ্যালয় বন্ধ করতে কিংবা নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠদান বন্ধ করতে পারবে। তারা পর্যালোচনা করে জানাবে। তারপর আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার সম্মতি দেবো।

এখন তো সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক রিপোর্ট প্রতিদিন সন্ধ্যানাগাদ পেয়ে যাবো। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত জানাতে সমস্যা হবে না। এখন সংক্রমণের হার এতই সামান্য যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যালয় বা নির্দিষ্ট কোনও শ্রেণির ক্লাস বন্ধ হবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: শিশুরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানবে? কিংবা শিক্ষকরা তাদের মানাতে পারবেন?

আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম: শিশুরা অভিভাবকদের চেয়ে বেশি মানছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি শুনে তারা অভিভাবকদেরই উল্টো বলছে—‘তুমি মাস্ক না পরে কোথায় যাচ্ছো?’ শিশুরা গুরুত্ব দিয়েছে, কারণ শিক্ষকরা তাদের বলেছে। শিক্ষার্থীরাই এখন অভিভাবকের ভূমিকায়।

বাংলা ট্রিবিউন: এখনকার পরিস্থিতিতে শ্রেণিতে নতুন ক্লাস যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে কি?

আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম: পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম প্রতি পাঠদিবসেই চলবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে বিদ্যালয়ে আসবে। প্রত্যেক শ্রেণির তিনটি করে বিষয়ে পাঠদান চলছে। এসওপি অনুসারে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে স্থানীয়ভাবে পাঠদান পরিকল্পনা নতুন করে করার কথা বলা আছে। আপাতত যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। নতুন ক্লাস যুক্ত হবে না। পাশাপাশি, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাস বন্ধ থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করোনা হলে চিকিৎসার ব্যয়ভার কে নেবে?

আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা তো ফ্রি হচ্ছে। তারপরও যাদের সামর্থ্য নেই তাদের বিষয়ে এসএমসির উদ্যোগে স্থানীয় প্রশাসন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবে।