রাজধানীতে উচ্চবিত্তের সন্তানরা কেন সরকারি প্রাথমিকে পড়ছে না

বলতে গেলে রাজধানীর উচ্চবিত্ত পরিবারের কোনও সন্তানই পড়েন না সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে। রাজধানীর ৩৮টি স্কুলে বাংলা ট্রিবিউন পরিচালিত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোয় পড়ছে। ৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও সরকারি স্কুলে পড়ছে। মন্তব্য দেননি ১৭ শতাংশ।

 

 

 

২০২১ সালেসমাজের কোন শ্রেণির ছেলে-মেয়েরা আপনার স্কুলে বেশি পড়ের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রাজধানীর ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৭ জন শিক্ষকের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে বাংলা ট্রিবিউন। যেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

আপনার সন্তানকে বাসায় কে পড়ায়

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। ভ্যানচালক থেকে শুরু করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত যেকোনও পরিবারের সন্তান— সবারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এদের সঙ্গে মিশলে সন্তানরা বখে যেতে পারে এমন ভাবনা থেকে হয়ত উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করায় না।’

আপনার সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট

তিনি জানান, ‘উচ্চবিত্তের সন্তানরাও যাতে সরকারি বিদ্যালয়ে আসে সে জন্য রাজধানীর ৩৪২টি বিদ্যালয়কে দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০টি বিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩৪২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে যেগুলোর মাঠ নেই সেখানে ইনডোর গেমের ব্যবস্থাও করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, “মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা হবে। দেশের ৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ করা হবে। লাইব্রেরির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আলাদা কর্নার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার করা হয়েছে।”

কম্পিউটার ল্যাব কি আছে

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘কিছু কিছু বিত্তবান চান না তাদের সন্তানরা দরিদ্র মানুষের সন্তানদের সঙ্গে পড়ুক। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। শিক্ষক বাড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার রয়েছে। বুকশেলফে বই রেখে লাইব্রেরির কাজ চালানো হচ্ছে। এই পরিবেশ আরও উন্নত করা যেতে পারে। কম্পিউটার ল্যাব করা হলে বিত্তবানদের শিশুরাও আসবে।’

খেলাধুলার সুযোগ কেমন

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘বিত্তবানদের মানসিকতা একটা বড় সমস্যা। তারা চায় না দরিদ্র শিশুদের সঙ্গে তার সন্তান পড়ুক। এছাড়া বিদ্যালয়ের সময়সূচির সঙ্গেও তারা সমন্বয় করতে পারে না।’

বিত্তবান পরিবারের শিশুদের সরকারি বিদ্যালয়ে আনতে করণীয় প্রসঙ্গে মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে ভালো মানের লেখাপড়া হয় তার প্রচার নেই। সেটি প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

 

শৃঙ্খলা ও অবকাঠামো

বাংলা ট্রিবিউন-এর জরিপে দেখা গেছে ৬৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন স্কুলে প্রতিদিন অ্যাসেম্বলি হয়। ৩৩ শতাংশ বলছে, কোনও অ্যাসেম্বলি হয় না।

প্রতিদিন কি অ্যাসেম্বলি হয়

সরকারি স্কুলগুলোয় খেলাধুলার সুযোগ মাঝারি মানের বলে মনে করেন ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে ভালো বলেছেন ১৯ শতাংশ। ১৮ শতাংশের মতে খেলাধুলার সুযোগ খারাপ।

জরিপে ৮০ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত টয়লেট রয়েছে।

জরিপের ৯৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন স্কুলের অবকাঠামোর আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।

বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কি আছে

শিক্ষা উপকরণ

জরিপে দেখা যায় ৫৯ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের স্কুলে পাঠাগার নেই। এই প্রশ্নে জরিপে অংশগ্রহণকারী অনেকেই জানিয়েছেন আলাদাভাবে লাইব্রেরি না থাকলেও ক্লাসরুমে বইয়ের আলমারি আছে। সেটাকেও পাঠাগার আছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে জরিপে ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী শিক্ষক জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনও কম্পিউটার ল্যাব নেই।

বিদ্যালয়ের অবকাঠামো আরও উন্নয়নের প্রয়োজন আছে কিনা

জনপ্রতিনিধিদের মনোযোগ

বাংলা ট্রিবিউনের জরিপে দেখা যায়, জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিত তাদের এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোঁজখবর রাখছেন। ৪৯ শতাংশ জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্কুলে প্রায়ই আসেন। ২৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান তারা ছয় মাসে একবার আসেন। এ প্রশ্নে মন্তব্য করতে রাজি হননি ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

আরও পড়ুন: সন্তান সরকারি না বেসরকারিতে, বলতে চান না অনেকেই