ধর্মের ধুয়া তুলে অপপ্রচার চলছে: শিক্ষামন্ত্রী

ধর্মের ধুয়া তুলে চিহ্নিত মহল শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

সমাবর্তন বক্তা ছিলেন লেখক ও কলামিস্ট অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে হঠাৎ করেই দেখছি অনেক মিথ্যাচার, অনেক অপপ্রচার চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে ধর্মের ধুয়া তুলে শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে বিশাল অপপ্রচার চলছে। এটি চিহ্নিত মহল থেকেই আসছে। আমি সবাইকে বলবো— গুজবে কান দেবেন না। সত্যতা যাচাই করবার আমাদের সবার সুযোগ আছে। আপনাদের আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় স্কুল আছে। শিক্ষার্থী আছে বা অনেক আত্মীয় আছে কেউ না কেউ স্কুলে পড়ে। আপনারা তাদের কাছ থেকে বইগুলো দেখে নিতে পারেন। যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সত্য কিনা? যা বলা হচ্ছে, যা বাদ দেওয়া হয়েছে শিক্ষাক্রম থেকে, তা আসলে বাদ দেওয়া হয়েছে কিনা, যা যুক্ত করা হয়েছে বলা হচ্ছে তা যুক্ত করা হয়েছে কিনা? শিক্ষাক্রম নিয়ে যে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেটার সতত্যা যাচাই করতে বলবো। দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে অপপ্রচার চলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছি, তার এখন পাইলটিং চলছে। আগামী ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল মিলিয়ে এই তিন বছরে নতুন শিক্ষাক্রমটি বাস্তবায়ন করবো। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত পুরা শিক্ষার যে ক্যানভাসটি সেখানে এতদিন আমরা সংখ্যার দিকে নজর দিয়েছি, সবাইকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। এখন শিক্ষার গুণগত মান অর্জন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে কাঙ্খিত মান, যা প্রয়োজন— সেই প্রাতিষ্ঠানিক জায়গাগুলা তৈরি করেছি। কাজেই আশা করছি, যারা বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা সমাপ্ত করে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে তারা দক্ষ যোগ্য জনশক্তি হিসেবে বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তিবান্ধব সৃজনশীল মানুষ হিসেবে তৈরি হবেন।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তথ্যটা খুব জরুরি। বলা হয় তথ্যই শক্তি। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত তথ্য কিংবা অযাচিত তথ্য সেটার ভারে যদি ভারাক্রান্ত হয়ে যাই, তাহলে জীবনের অনেক মূল্যবান সময় কেড়ে নেবে, নিচ্ছেও। আমরা অতিমাত্রায় ডিভাইসনির্ভর হয়ে যাচ্ছি।  আমাদের মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা হারাচ্ছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে নিশ্চয় আমাদের চলতে হবে। আয়ত্ত করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দাসে পরিণত না হই। এই সব বিষয় মাথায় রেখে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম মফিজুল ইসলাম।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মেজর জেনারেল (অব.) কাজী ফকরুদ্দীন আহমেদ সমাবর্তন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের উপদেষ্টা, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট ১৩০২ জন শিক্ষার্থী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তাদের নিজ নিজ অর্জিত ডিগ্রি গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুন নাহার, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহদী-আল-মাহমুদ এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা-ই-জামান সকলেই স্নাতক পর্যায়ে সিজিপিএ-৪ পেয়ে আচার্য স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে শামসুন নাহার ভ্যালেডিক্টরিয়ানের বক্তব্য রাখেন।

সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র ভিত্তিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৫ জন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ৪ জন এবং কলা ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ৬ জন শিক্ষার্থী উপাচার্য স্বর্ণপদক অর্জন করেন।