বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির অভিমত

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সে ব্যাপারে সেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্র রাজনীতি করা না করার বিষয়ে এমন মতামত জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

গত ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড ট্রাস্টির চেয়ারম্যানদের এবং উপাচার্যদের কাছে লিখিতভাবে এই মতামত পাঠায় সমিতি। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন লিখিত মতামত জানান। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে অবগত। ট্রাস্টের অধীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মূলত সেশনজটমুক্ত, অলাভজনক, অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যকে স্বাগত জানান। শিক্ষামন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী নিয়ম-কানুন করলো, কোন রাজনৈতিক দলের কী ব্যবস্থা হলো, সেটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের বিষয়। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিক করে না। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপও করে না। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, তা সেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নেবে।’

সমিতি জানায়, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পলিসি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে। বিশ্বমানের কোর্স-কারিকুলাম, সেমিস্টারভিত্তিক কর্মোপযোগী আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি, সেশনজট ও রাজনৈতিক সংঘাতমুক্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশ-বিদেশে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আস্থা ও সুনাম অর্জন করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নানামুখী প্রতিভার বিকাশ ও নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনের জন্য সহশিক্ষা ও অতিরিক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থী সংগঠন তথা বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ভিত্তিক স্টুডেন্ট ক্লাব নিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এসব ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় স্টুডেন্ট কমিটিগুলো নিয়মিতভাবে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক চর্চা, মন ও শরীর গঠনের মতো আয়োজন করে। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে এসব অনুষ্ঠিত হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতনতা ও সম্পৃক্ততাকে নিরুৎসাহিত করে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কিনা তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা শান্তিশৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহমত ও সন্তুষ্ট। ক্যাম্পাসের বাইরে ইতিবাচকতা রাজনীতির ধারায় অংশগ্রহণ করার বিষয় একান্তই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাই ঠিক করবেন।

আমরা মনে করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পলিসি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

আরও পড়ুন- 

সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করেই ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: কাদের

কেউ বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, কেউ বলেন থাকুক: শিক্ষামন্ত্রী

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি: বিস্মিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা