সেই উপ-পরিচালককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন শিক্ষকদের

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কলেজ-২) এনামুল হক হাওলাদারের শাস্তি দাবি করে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন দুই কলেজ শিক্ষক। আদালতের রায় অমান্য করে পদোন্নতি বঞ্চিত করা, ঘুসের দাবি করে ফাইল আটকে রাখা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে এই আবেদন করেছেন তারা।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে অপসারণ দাবি করেন দুই আবেদনকারী।

এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেসরকারি একটি কলেজের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে চার কোটি টাকা ঘুস দাবি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এনামুল হকের বিরুদ্ধে। বাংলা ট্রিবিউনে  এসব বিষয়ে একাধিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত ২ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিসংখ্যান বিষয়েরে প্রভাষক মো. মোফাজ্জল হোসেন। আর পরদিন গত ৩ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জের আবাস উদ্দিন খান সোহাগপুর মডেল কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক শেখ হাবিবুর রহমান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো লিখিত অভিযোগে উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদারকে পদ থেকে অপসারণ এবং কলেজ অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে লিখিত অভিযোগে আদালতের রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি চান প্রভাষক শেখ হাবিবুর রহমান।

লিখিত চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আদালতের রায় অমান্য করে অসৎ উদ্দেশ্যে ফাইল আটকে রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কলেজ-২) এনামুল হক হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘আমি এবং অন্য দুই জন ২০১০ সালে প্রভাষক পদে এমপিওভুক্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সন্তোষজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুসারে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আট বছর পূর্ণ করে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি যোগ্যতা অর্জন করি ২০১৮ সালে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন মোটা অংকের উৎকোচের দাবি করে রেজুলেশন করে তা অগ্রায়নে বিলম্ব করেন। যা চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অধ্যক্ষের উৎকোচের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ প্রতিকার চেয়ে আপনার (মাহাপরিচালক) বরাবর আবেদন করলেও এনামুল হক হাওলাদার অধ্যক্ষের মতই অসৎ উদ্দেশে তা বাস্তবায়ন না করলে আমরা মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করি।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘আদালত আমাদের ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদার অসৎ উদ্দেশ্যে আদালতের আদেশ অমান্য করে দীর্ঘ প্রায় আট মাস হয়রানি করে ২০২১ সালের নতুন নীতিমালা অনুসারে দুই বার দুই ধরনের অস্পষ্ট চিঠি দেন। এই চিঠিগুলো রিট অর্ডার পরিপন্থী এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে মহাপরিচালককে আদালত অবমানাকারী হিসেবে গণ্য করিয়েছেন তিনি।’

উপ-পরিচালক সারাসরি ঘুষ চেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদার তার অফিস স্টাফদের মাধ্যমে আমার কাছে টাকা দাবি করেন। আমি তা দিতে রাজি হইনি।  এর ফলে আমার এই অবস্থা। আগে অধ্যক্ষ আমার কাছে টাকা চেয়েছিলেন। যা আমি দিতে না পারায় পদোন্নতি বঞ্চিত হই। ’

এদিকে গত ২ নভেম্বর উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদারকে তার পদ থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে লিখিত আবেদন করেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিসংখ্যান) বিষয়েরে প্রভাষক মো. মোফাজ্জল হোসেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদারের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে হয়রানি এবং শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ আনেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে আপনার (সচিব) কাছে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করতে বাধ্য হলাম। আমি কাছিকাটা কলেজে গভর্নিং বডির মাধ্যমে যথাযথভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছি। জাল সার্টিফিকেট দিয়ে যারা নিয়োগ পেয়ে কর্মরত ছিলেন তাদের ইনডেক্স না কাটায় আমাদের ইনডেক্স সচল করা যাচ্ছে না। এজন্য আমরা যথাযথভাবে অধিদফতরে আবেদন করলেও দীর্ঘদিন এনামুল স্যার আমাদের কাজ আটকে রাখেন। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে পূর্ববর্তীদের ইনডেক্স কর্তন করার কথা থাকলেও তিনি কালক্ষেপন করছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তিনি অন্য শিক্ষকদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। ’

২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী আদালত পদোন্নতি দিতে বলেছেন। অথচ তিনি তখন দেননি। প্রতিপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে কাজটি আটকে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন এই প্রভাষক।

উপ-পরিচালক (কলেজ-২) এনামুল হক হাওলাদারকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে অব্যাহতি দিয়ে শিক্ষকদের রক্ষা করা এবং বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ জানানো হয় লিখিত অভিযোগে।

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক (কলেজ-২) এনামুল হক হাওলাদার ঘুস দাবি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এসব মিথ্যা। অর্থনীতির প্রভাষক শেখ হাবিবুর রহমানের বিষয়টি আইন শাখার মতামত নিয়ে করা হয়েছে।  তখন পদোন্নতি ৫ অনুপাত ২ ছিল। সে অনুপাতে দুই জনকে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে তিনি পাননি। আদালত বিধিবিধানের আলোকে দিতে বলেছেন। পরবর্তী নীতিমালা অনুযায়ী তিনি পাবেন।’

তবে শেখ হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘এনামুল হক হাওলাদার মিথ্যা বলছেন।  ৫ অনুপাত ২ অনুসারে আমরা ৫ জন পেতাম।  কিন্তু পদোন্নতি না দেওয়ায় আদালতে গিয়েছি। উচ্চ আদালত সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন রায়ে। উনি ঘুস না পেয়ে আমাকে বঞ্চিত করেছেন।’

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিসংখ্যান বিষয়েরে প্রভাষক মো. মোফাজ্জল হোসেনের এমপিওভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে  উপ-পরিচালক এনামুল হক হাওলাদার বলেন, ‘আমি একা তো ফাইল সই করি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (মাহাপরিচালক) বিষয়টি দেখেন।’