X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো

এস এম আববাস
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৫৯

জনবল কাঠামোতে না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেতনবঞ্চিত বেসরকারি অনার্স কলেজের শিক্ষকরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা থাকলেও নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। এসব কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে চলছে অসন্তোষ। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

শিক্ষকরা বলছেন, সরকারের উপেক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যের কারণে শিক্ষার মান ধরে রাখা কতটা সম্ভব তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। আমরা উচ্চশিক্ষার মান ধরে রাখতে সরকারের কাছে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরি হবে।

অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বেসরকারি অনার্স কলেজের বেতন-ভাতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়ার কথা। তাছাড়া শিক্ষার মান বাড়াতে আমরা সব রকম পদক্ষেপ নিয়েছি। বেসরকারি কলেজাগুলোকে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে একাধিকবার।

জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যখন চিঠি দিচ্ছি তখন কলেজগুলো বেতন একটু বাড়ায়, কিন্তু তারা বলে আয় কম। এ ক্ষেত্রে আমরা নিয়ম না মানার কারণে অধিভুক্তি বাতিল করতে পারি, কিন্তু সেটি সমাধান নয়। অধিভুক্তি বাতিল করলে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা চাকরি হারাবেন। এখন বেশিরভাগ কলেজে বেশি শিক্ষক নেই। মন্ত্রণালয়কে বলেছি, এদের এমপিওভুক্তির আওতায় আনার। এটি ছাড়া এই সমস্যা সমাধান করার উপায় নেই। কারণ কলেজগুলো যখন অধিভুক্তি নেয় তখন তারা বলেছে স্ব স্ব কলেজ তাদের বেতন দেবে। কিন্তু দেয় না।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘একটি আলোচনা কোভিডের আগে সরকারের সঙ্গে অনেকটা এগিয়েছিল। সরকার যদি ৫০ শতাংশ দেয় আর বাকিটা কলেজগুলোর কাছ থেকে আদায় করতে পারি। এমপিওভুক্তির জন্য আমি মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি আবারও তুলেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছে কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।’  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সলিমুল্লাহ কলেজের এইচএসসি ও ডিগ্রি স্তরের এমপিওভুক্ত প্রভাষক সরকারিভাবে মাসে বেতন পান ৩২ হাজার ৪৮৬ টাকা। কলেজ থেকে পান ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলয়ে গড়ে মোট বেতন ৪৭ হাজার ২৩৬ টাকার বেশি। আর একজন সহযোগী অধ্যাপক বেতন পান ৫২ হাজার ২৬৭ টাকা থেকে ৫৪ হাজার ৮৮০ টাকা। অন্যদিকে অনার্স স্তরের শিক্ষকরা নির্ধারিত বেতন পান মাত্র ২১ হাজার টাকা।

শুধু এই কলেজে নয়, রাজধানীর কয়েকটি নামিদামি বেসরকারি অনার্স কলেজ ছাড়া রাজধানী ও আশেপাশের বেসরকারি কলেজগুলোর অবস্থা প্রায় একই রকম। অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে মফস্বল এলাকার কলেজগুলোয় বৈষম্য আরও বেশি।

কুড়িগ্রাম শহরের মজিদা আদর্শ কলেজের এপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি নির্ধারিত বেতন পাচ্ছেন নিয়মিত। আর কলেজ থেকে বাড়িভাড়াও নিচ্ছেন। পক্ষান্তরে ১১ মাসের বেতন বকেয়া অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের। অনার্স-মাস্টার্স স্তরে ক্লাস নেওয়ার জন্য চার থেকে ৮ হাজার টাকা ভাতাও দেওয়া হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। অথচ অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় অর্থ। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের আহ্বায়ক ও  মজিদা আদর্শ কলেজের প্রভাষক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘দুই-তিন মাস পর পর এক মাসের বেতন দেয় ১৫ হাজার বা ১৭ হাজার টাকা। ঈদের আগে বোনাস দিয়েছে ৮ হাজার ৮০০ টাকা। এ কারণে অনেক শিক্ষক অসন্তোষ নিয়ে ক্লাস করান।’

তিনি আরও বলেন, যেসব কলেজের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য আছে সেসব কলেজও বৈষম্য করে। অনেক কলেজে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের পরীক্ষা ও ভর্তির সময় কিছু অর্থ নামমাত্র দেওয়া হয়। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয় মাসে। আবার দেশের অনেক কলেজে শিক্ষকদের বছরের পর বছর বেতন দেওয়া হয় না। বেতন না পাওয়া শিক্ষকরা চাকরি হারানোর ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারেন না। সেসব কলেজে উচ্চশিক্ষার মান থাকবে কীভাবে?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী ডিগ্রিস্তর পর্যন্ত পরিচালিত এমপিওভুক্ত কলেজগুলোয় ১৯৯৩ সালে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে শিক্ষকদের মূল বেতন দেওয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় অনুমোদন নেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই পর্যায়ে কলেজগুলোর জনবল কাঠামোতে স্থান পায় না অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের পদ। ফলে সরকারি বিধিবিধানের আলোকে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তারা।

দেশের পাঁচ শতাধিক কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। তবে বিগত কয়েক বছরে দুই শতাধিক কলেজ জাতীয়করণ করে সরকার। বাকি থাকে ৩১৫টি কলেজ। এসব কলেজের শিক্ষক সংখ্যাও কমে গেছে।

/এমএস/
সম্পর্কিত
শিক্ষার্থীকে মারধর করে শিক্ষক বললেন, ‘শাসন করেছি’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি
উপাচার্য-শিক্ষক দ্বন্দ্বের যাঁতাকলে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষ খবর
চীন সফরে পুতিন, পরীক্ষার মুখে ‘নো লিমিট’ বন্ধুত্ব
চীন সফরে পুতিন, পরীক্ষার মুখে ‘নো লিমিট’ বন্ধুত্ব
শির সঙ্গে বৈঠক করতে চীন সফরে পুতিন
শির সঙ্গে বৈঠক করতে চীন সফরে পুতিন
মেসি না থাকায় জিততে পারেনি ইন্টার মায়ামি
মেসি না থাকায় জিততে পারেনি ইন্টার মায়ামি
বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হলো কবর খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গ্রেনেড
বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হলো কবর খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গ্রেনেড
সর্বাধিক পঠিত
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা