একান্ত সাক্ষাৎকারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির অনুমতি দেওয়া হোক

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনে প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২৩-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। র‌্যাংকিংয়ের তালিকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ৬০১-৮০০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। তাদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একই তালিকায় রয়েছে।

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান, গবেষণার মান, বাজারে চাকরির চাহিদাসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম।

বাংলা ট্রিবিউন: টাইমস হায়ার এডুকেশনে প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২৩-এ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। এই অর্জনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. আতিকুল ইসলাম: ছাত্র, শিক্ষক ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজসহ সবার প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে, একদিনে হয়নি। আমরা ৬০১ থেকে ৮০০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এরমধ্যে। আপনি দেখবেন, সর্বশেষ র‌্যাংকিংয়ে ১০৪টি দেশ থেকে ১৭৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাংকিং দিয়েছে। এরমধ্যে ৬০০ থেকে ৮০০’র মধ্যে যাওয়াটা খুবই আনন্দের বিষয়। এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবারই কৃতিত্ব রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো–এমন সমালোচনাও আছে। কীভাবে কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছানো সম্ভব বলে আপনি মনে করেন।

ড. আতিকুল ইসলাম: যে সমালোচনা হচ্ছে এর যথাযথ কারণ রয়েছে। র‌্যাংকিংয়ে যদি বাংলাদেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় কোনও অবস্থান পেয়ে থাকে, তাহলে ভারতের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে– কেন বাংলাদেশ এতটা পিছিয়ে? ওদের যদি ৪০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের একটাও নেই কেন।

আমরা তো মেধার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। কেন র‌্যাংকিংয়ে ওদের মতো ভালো করতে পারছি না? এ বিষয়টি নিয়ে তো অসন্তোষ থাকবেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া টিউশন ফি দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চালায়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সরকার শত কোটি টাকা দিচ্ছে। এর পরিবর্তে দেশের মানুষ কি আশা করতে পারে না যে তারা আন্তর্জাতিকভাবে ভালো ফলাফল এনে দেবে?

এনএসইউ-ভিসি

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে ভালো করার উপায় কী হতে পারে?

ড. আতিকুল ইসলাম: উত্তরণের জায়গাটা শর্টকাট নয়। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত আমাদের বেশি, গত র‌্যাংকিংয়ে নর্থ সাউথের ৩১ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ছিল একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক আছেন। ১৬ জন মানে হচ্ছে অনেক ভালো। কিন্তু টপ র‌্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখেন। সেখানে পাঁচ জনের জন্য একজন শিক্ষক বা প্রতি আড়াই জনের জন্য একজন শিক্ষক। সেই হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায় না, শুধু এই অনুপাতের জন্য। গবেষণার জন্য আরও প্রোডাকটিভ হওয়া উচিত। আমাদের দেশে একবার চাকরি পেলে তো চাকরি যায় না। গবেষণা করেন বা না করেন। পদোন্নতির সময় সবসময় ‘সিনিয়রিটি’ দেখি। বিদেশের কোথাও এটির এক পয়সারও দাম নেই। আমাদের সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। গবেষণা বাড়াতে হবে, আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের তুলনায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বাড়াতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে পারে– প্রতি এতজন আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের বিপরীতে একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট আছে। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্য। কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে  কেউ পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হতে পারছেন না। কাজেই ওখানে আমরা শূন্য পাচ্ছি। তারপর শিক্ষকের সঙ্গে পিএইচডি শিক্ষার্থীর অনুপাত কত? সেখানেও শূন্য পাচ্ছি। কারণ, আমাদের তো পিএইচডি শিক্ষার্থী নেই।

আমাদের দেশে যদি সেশন-জট না হয়, ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজে লেকচার দেওয়া হয়, পরীক্ষা নেওয়া হয়, যদি উচ্চ কিংবা ভালো মানের গবেষণা থাকে, নিরাপত্তার সঙ্গে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে– তাহলে বাইরের দেশ থেকে ছাত্র আসবে। র‌্যাংকিংয়ে সেটাও দেখা হয়। আর র‌্যাংকিং ভালো না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসবে না। বিদেশি ছাত্র আসলে র‌্যাংকিংয়ে ওপরে উঠতে সুবিধা হবে। বিদেশি শিক্ষক আসবে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে। গবেষণার মান যদি বৃদ্ধি পায়– এসব শুধু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বিশ্বব্যাপী এগুলো যদি করতে পারি, তাহলে র‌্যাংকিংয়ে ভালো করা যাবে। এসব একদিনে করা সম্ভব নয়, তবে দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিলে অবশ্যই সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি করানোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে ইউজিসিতে একটি আলোচনা হয়েছিল। সে বিষয়ে কি কোনও অগ্রগতি আছে?

ড. আতিকুল ইসলাম: অগ্রগতি বলতে কিছুই নেই। এটি থেমে আছে। হয়তো তারা চিন্তা করে গবেষণার করার মতো কয়জন শিক্ষকের যোগ্যতা আছে? কিংবা এটি যদি ‘মিসইউজ’ হয়!

আমাদের কথা হলো– আপনারা কিছু শর্ত ঠিক করে দিন। বলে দিন– পিএইচডি করতে হলে কতজন শিক্ষক থাকতে হবে। কতজন শিক্ষকের কতগুলো মানসম্পন্ন গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। যেমন- বলতে পারেন, শতকরা ২৫ ভাগ পিএইচডিধারী শিক্ষক নেই, এমন বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি করানোর সুযোগ দেওয়া হবে না।

শর্ত যদি ঠিক করে দেওয়া হয় এবং সেগুলো যারা পূরণ করতে পারবে, তাদের পিএইচডি করানোর অনুমতি দেওয়া হোক। যারা কোয়ালিটি মেনটেন করতে পারছে না, তাদের উন্নতি করাতে হবে। সরকারের বড় দায়িত্ব এগুলো দেখভাল করা।

বাংলা ট্রিবিউন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় কেমন ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন? কোনও সমস্যা দেখেন কিনা?

ড. আতিকুল ইসলাম: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা চলে এসেছে, অথচ আমরা টাকা খরচ করতে পারছি না।  রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত গিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। যারা গবেষণা করার জন্য টাকা দেয়, তারা তো আমাদের মতো না। পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করার জন্য টাকা দেয় না। এক বা দুই বছরের মধ্যে তারা ফলাফল দেখতে চায়। কিন্তু দেখা গেলো, দুই বছরের  মধ্যে ফান্ড অনুমোদনই হলো না। তাতে টাকা ফেরত যায়। আমরা নর্থ সাউথ যেটা করি তা হচ্ছে, যে টাকাটা এসেছে তার বিপরীতে গবেষককে অগ্রিম অর্থ দেই। গবেষককে বলি রিপোর্ট দিয়ে দিতে। তারপর বাকিটা ফান্ড অনুমোদনের পর নিতে হয়।

এনএসইউ-ভিসি-2

বাংলা ট্রিবিউন: অনেক সময় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রাখা হয় না। এক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন—এই খাতটির যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাস্টি, উপাচার্যদেরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন?

ড. আতিকুল ইসলাম: দু’রকম বিষয় আছে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সুনির্দিষ্ট আইনে চলছে। তাদের স্বায়ত্তশাসন আছে। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড বা পরিবর্তনের সময়কালও থাকতে হয়। যেমন- তিন সেমিস্টার থেকে দুই সেমিস্টারে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এ জন্য যে ট্রানজেশন সময় দিতে হবে, পরিকল্পনা দিতে হবে, সরকার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। কার কী সমস্যা হচ্ছে তা জানা, বলতে পারেন— কীভাবে আরও ভালো মতো করা যায়। এ ধরনের সহায়তা তেমন পাচ্ছি না। আমার মনে হয়, যারা উপাচার্য আছেন, ট্রাস্টিজ আছেন– যাদের ওপর দায়িত্ব আছে, তারা পুরো ফান্ড দিয়েছেন। সেই হিসেবে আমার মনে হয়, কনসালটেশন বা আলোচনা আরেকটু বাড়লে ভালো হতো।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার বয়স মাত্র ৩০ বছর বা এর কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। ৩০ বছরের এ সময়টাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড. আতিকুল ইসলাম: ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘ইউনিভার্সিটি ইজ নট আ স্প্রিন্ট, ইটস আ ম্যারাথন’। ৩০ বছর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছুই নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সময় দিতে হবে, প্রণোদনা, পরিবেশ, শৃঙ্খলা থাকতে হবে। এসব করার দায়িত্ব সরকারের।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা মোতাবেক কোর্স তৈরি করা যাচ্ছে? কিংবা যা পড়ানো হচ্ছে, সেটা শিক্ষার্থীদের চাকরি ক্ষেত্রে কাজে লাগছে?

ড. আতিকুল ইসলাম:  আমাদের দেশে শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি আছে। বাবা পর্যন্ত ব্যবসা করেছেন পুরনো ব্যবসার মডেলে। ছেলে অক্সফোর্ড থেকে লেখাপড়া করেছে, কিন্তু বিজনেস ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে স্কিল কম। এখানে যে গবেষণা বাড়াবেন—তার জন্য আস্থা থাকতে হবে। এসব সময় মতো হওয়া লাগবে এবং সামর্থ্যের মধ্যে হতে হবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রবলেম যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে বিদেশে গবেষণা হচ্ছে। সেখান থেকে যদি আউটপুট পাওয়া যায়, তাহলে এখানে কেন টাকা খরচ করে গবেষণা হবে? অ্যাডভান্স রিসার্চ কোথায় হচ্ছে? দেশের বাইরে। সেটার ফলাফল আমরা বিনে পয়সায় পেয়ে যাচ্ছি। এ ধরনের গবেষণা এখানে কোয়ালিটি বজায় রেখে পারবে কিনা? সময় মতো শেষ করতে পারবে কিনা? সে চিন্তাও তাদের আছে। এসব কারণে ইন্ডাস্ট্রি আমাদের ওপর এতটা আস্থা আনতে পারছে না।

আরেকটি হচ্ছে, আমেরিকায় হিউজ স্কেলে ইন্ডাস্ট্রি। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ‘রিসার্চ ল্যাব’ রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দায়িত্ব দিয়ে দেয়। আমাদের তো এমনটা নেই।

ইন্ডাস্ট্রি, প্রফেশন আর সরকার—এ তিনটির যোগাযোগ সব সময় ছিল, এখনও আছে। কিন্তু আমাদের একটা লিমিটেশনও আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও বড় হবে, তাদের বাজেট আরও বাড়বে, তারা মনে করবে লোকাল সলিউশন নিই। গবেষণার ওপর তাদের আস্থা থাকতে হবে। গবেষণার নাম দিয়ে একটা কিছু করলেন, কিন্তু বাস্তবে কোনও কাজে লাগলো না, তাহলে তো হয় না। আমাদের দেখতে হবে—কোন ধরনের দক্ষতার চাহিদা বাজারে আছে। এটা না-হলে চাকরি হবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কারিক্যুলাম আপডেট করার কথা ভাববেন কিনা?

ড. আতিকুল ইসলাম: আমরা নিয়মিতভাবেই কারিক্যুলাম আপডেট করছি। সেখানে ইন্ডাস্ট্রির ইনপুট আছে। আমাদের সমস্যা না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে পাসের জন্য, অপরদিকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি, সেগুলো দেখতে হবে। ছাত্ররা মনে করে সরকারি চাকরি করবো, সে জন্য প্রস্তুতিতে প্রচুর সময় দেয়।

অথচ একসময় অভিযোগ পেতাম— নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় আসে না। কিন্তু এখন যাচ্ছে। আগে যে বেতন পেতো, এখন তার চেয়ে ভালো, তাই যাচ্ছে। যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করি তাতে আমরা ভাবি, যেন দুনিয়ার যেকোনও জায়গায় চাকরি পায়। তারা চিন্তা করবে গ্লোবালি। কিন্তু লোকালসহ যেকোনও জায়গায় হতে পারে। আমাদের প্রচুর শিক্ষার্থী আছেন—যারা ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করছেন। আমরা বিশ্বের প্রতিটি মার্কেট দেখি। আমরা তো কমিউনিস্ট দেশ না, যে সরকার বলে দেবে কত ডাক্তার লাগবে, কতজন ইঞ্জিনিয়ার লাগবে। ফ্রি ইকোনমি ও ডেমোক্রেসি, যার যার ইচ্ছামতো কাজ করছে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় চায় তাদের শিক্ষার্থীরা ভালো চাকরি পাক। তার জন্য তারা ইন্ডাস্ট্রি ও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে। এটা বাড়াতে এক পক্ষ উদ্যোগ নিলে হবে না। ইন্ডাস্ট্রি থেকেও চাহিদা আসতে হবে। সরকার থেকেও চাহিদা আসতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিন্তা করতে হবে, আজ যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি করছি তারা চার-পাঁচ বছরের মাথায় চাকরির বাজারে গিয়ে ঢুকবে। তখন ওই বাজারটার কন্ডিশন কী হবে? আমরা তো আজকের জন্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি না। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই উচিত—চাকরিদাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা। কারণ, তারাই তো অর্থনীতির আঙুলটি ধরে রেখেছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আমরা দেখি বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের দেশের স্থানীয় সমস্যা সমাধান করে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে নর্থ সাউথ কি তেমন অবদান রাখতে পারছে?

ড. আতিকুল ইসলাম: গবেষণায় নর্থ সাউথের অবদান জিওমেট্রিক্যালি গ্রো করছে। দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো গতিতে এগোচ্ছে। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সজাগ। সরকারের পাওয়ার ডিভিশনের সঙ্গে আমরা কয়েক কোটি টাকার গবেষণা করেছি। ভালো আউটপুটও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর ২ কোটি টাকা মঞ্জুরি পেয়েছি, কাজ চলছে। এমন কোনও সরকারি বিভাগ নেই, যেখানে আমরা কাজ করছি না।  ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কাজ করছি। গবেষণায় টাকা পয়সার অভাব নেই।  টাকা খরচ করার জায়গাই তো নেই। আমার গত তিন বছরের যে বাজেট, তা খরচ করতে পারিনি। কারণ, মেরিটোরিয়াস প্রকল্প আসছে না। গবেষণার জন্য বাংলাদেশের যে কেউ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। অন্য যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ নর্থ সাউথে আবেদন করতে পারবেন।  একটাই শর্ত, নর্থ সাউথ থেকে কমপক্ষে একজন গবেষক থাকতে হবে। আমরা একজন, আপনার পাঁচ জন হোক। মেরিট থাকলে অবশ্যই আমরা বাদ দেইনি। গবেষণাকে তো আমরা নর্থ সাউথের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিনি। সবাই করতে পারবে।

বাংলা ট্রিবিউন: নর্থ সাউথ বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ চালু করেছে।  দেরিতে কেন এ বিভাগটি খোলা হলো? আর নতুন কোনও বিষয় খোলার পরিকল্পনা আছে কি?

ড. আতিকুল ইসলাম: পৃথিবীর সব দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় বাজারের চাহিদা যাচাই করে বিভিন্ন বিষয় শুরু করে। বাজারের চাহিদার ওপর সফলতাও নির্ভর করে। তাদের কেউ কিছু টাকা দিয়ে বলেননি যে, আপনি এক্সপেরিমেন্ট করেন। কাজেই তাদের ডিমান্ড ও সাপ্লাই দুটোই দেখতে হয়। কোন বিষয়ের ডিমান্ড আছে, কোন বিষয়ে চাকরি পাচ্ছে— সেগুলো দেখতে হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কনপ্রিহেনসিভ হতে সময় লাগে। প্রথমে যেগুলো শুরু হয়েছে, যেমন- ব্যবসা প্রশাসন ও কম্পিউটার সায়েন্স। এসব বিভাগে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। আমরাও এভাবে শুরু করেছি। আস্তে আস্তে কমপ্রিহেনসিভ হচ্ছে। এই মুহূর্তে বলতে পারি, আমাদের আরও ১০টি বিষয় খোলা দরকার আছে, কিন্তু পারছি না।

যেমন- বাংলাদেশে কনস্ট্রাকশন হচ্ছে, কিন্তু কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্টের ওপর কোথাও পড়ালেখা হচ্ছে কিনা, আমার জানা নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বড় হয়েছে, ফুটবলও বড় হবে। একটি স্পোর্টস সায়েন্স, স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট হতে পারে। যেখানে ফুটবলের ক্লাবগুলোতে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাজেট থাকে। সেগুলো কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে, তার ওপর স্পেশালিস্টও আছে। নার্সিং মেডিসিন ফ্যাকাল্টি নর্থ সাউথে নেই। অনেক কিছুই নেই, কিন্তু এগুলো করতে হবে। ছেলেদের বোর্ডিং নেই। মেয়েদের হোস্টেল নেই। ঢাকার বাইরে থেকে এসে মেয়েরা একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকে। যদি রোকেয়া হলের মতো একটি হল থাকতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকতো, হন্যে হয়ে থাকার জায়গা খুঁজতে হতো না।

নতুন ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়ে সবার জন্য হল থাকবে, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ব্যবস্থা থাকবে। তা না-হলে সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থীকে হারিয়ে ফেলবো। অনেক কিছু করার আছে। ৫ বছর, ১০ বছর, ৫০ বছরের প্ল্যান থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

ক্যাম্পাস আছে কিন্তু বিস্তৃত না। আমাদের বড় খেলার মাঠ নেই, সুইমিং পুল নেই। অনেক কিছুই করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: জেন্ডার সমতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, জেন্ডার সচেতনতার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয় কিনা?

ড. আতিকুল ইসলাম: নর্থ সাউথে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী। গার্লস রেসিডেন্স থাকলে নারী শিক্ষার্থী আরও বেশি হতো। আর জেন্ডার সচেতনতায় সবচেয়ে এগিয়ে আছি। জ্ঞাতসারে কোনোভাবেই ডেসক্রিমিনেশন হতে দেবো না। তবে পুরো সমাজে যদি বৈষম্য থাকে, তাহলে কিছু না কিছু রিফ্লেকশন সব জায়গায় থাকবে। এ জন্যই পরিবার ও সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা

ড. আতিকুল ইসলাম: আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ।