ভবনটির অনেক অংশ ধসে পড়েছে, বিভিন্ন স্থানের বিম এবং পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। এই জরাজীর্ণ অবস্থা খুলনার গোয়ালখালি উপজেলায় অবস্থিত দৃষ্টি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ভবনের। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১৮ সালে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি)। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই পরিত্যক্ত ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা আর পাঠদান করছেন শিক্ষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলা বিশিষ্ট এই বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা একেবারেই পরিত্যক্ত। সেখানে ক্লাস হয় না। বাকি দুটি তলায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভবনটির প্রতিটি পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ভবনের চারপাশের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। তৃতীয় তলার বিম ভেঙে পাশে রড বের হয়ে গেছে। ভেতরের বিমগুলোর অবস্থাও করুণ। দিনের বেলায়ও বিদ্যালয়ের ভেতরে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূতুড়ে পরিবেশ। যেকোনও সময় ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবাসিক দৃষ্টি ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধায়ক নার্গিস আক্তার (৫২) বলেন, ‘দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে আমি এখানে আছি। ইশারায় কথা বলতে বলতে এখন আমি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে মাঝেমধ্যে কিছুটা বিব্রতবোধ করি। আমার পরিবারের সবাই বেশিরভাগ ইশারায় কথা বলে। এখানকার সবাই আমার সন্তানের মতো। এখানে খুবই জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন দরকার। স্থায়ীভাবে ভবন না হলে অস্থায়ীভাবে হলেও কিছু একটা করা দরকার। এতগুলো শিক্ষার্থীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এখানে পড়াশোনা হচ্ছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় নেবে কে?’
সরকারি দৃষ্টি ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শাইখ সাজ্জাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘এই স্কুলটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি ‘ইশারা ভাষা দিবসে’ এখানে ফর্ম পূরণের মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয়। বর্তমানে এই স্কুলটিতে ১২৩ জন দৃষ্টি ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ১০৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ১৫ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী। এই বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা দেখে পিডব্লিউডি ২০১৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন ভবনের জন্য আমরা সমাজসেবা অধিদফতরে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তার কোনও অগ্রগতি নেই। আমাদেরকে বারবার আশ্বাস দিচ্ছে নতুন ভবন হবে। একনেকে ওঠার কথা রয়েছে। কিন্তু কবে হবে বা উঠবে তা সঠিক বলতে পারছি না। উপায়ান্তর না দেখে আমরা ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’’
সৈয়দ শাইখ সাজ্জাদ বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী বাগানে জরুরি কাজ সারতে যাওয়ার পথে তাকে সাপে কাটে। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতবছর নবলোক ও ওয়াটার এইডের সহযোগিতায় দৃষ্টি ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য আধুনিক শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে এখন কোনও সমস্যা হয় না।’