মাউশিতে এমপিও আবেদন করতে পারবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওর জন্য সরাসরি আবেদন করতে পারবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে। এখন আর ২৬ ফর্দ নয়, মাত্র চার ফর্দ কাগজ অনলাইনে আপলোড করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এই আবেদন করা যাবে। অনলাইনে যাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা আবেদন করতে পারেন, এ জন্য মাউশি একটি অনলাইন ব্যবস্থা চালু করবে। শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তি দূর করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মাউশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে তথ্য যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্ত করবে। এ লক্ষ্যে দেশের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি স্তরের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের স্মার্ট ওয়েবসাইট তৈরি করার নির্দেশনা দিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিগগিরই ওয়েবসাইট তৈরির নির্দেশনা জারি করবে অধিদফতর।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করা সংক্রান্ত এই কর্মশালায় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৬ জুলাই ২ হাজার ৭১৬টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে এমপিওভুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় সরকার। বিধিবিধান মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হলেও, এখনও সব শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তি শেষ করতে পারেনি মাউশি।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক বা কর্মচারীকে এমপিওভুক্তি জন্য ২৬ ফর্দ কাগজ জমা দিতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইনে এই আবেদন করতে হয় উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা ই-ফাইলে অনুমোদন দিয়ে পাঠান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বরাবর। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ই-ফাইল অনুমোদন দিয়ে পাঠান বিভাগীয় আঞ্চলিক অফিসে। আঞ্চলিক অফিস থেকে এমপিও দেওয়ার সুপারিশ চেয়ে ফাইল পাঠানো হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, ঢাকায়।

এরপর এমপিও কমিটির বৈঠকে সুপারিশ করা হয় এমপিওভুক্তির জন্য। অনেক সময় অনেক কাগজ আপলোড দিতে গিয়ে সমস্যা তৈরি হলে এমপিও আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক-কর্মচারীরা ভোগান্তির শিকার হন।

কর্মশালার সিদ্ধান্তে জানা গেছে, নিয়োগ ও যোগদানপত্র, রেজুলেশন, এনটিআরসিএ সনদ এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগের সুপারিশের ডকুমেন্ট জমা দিয়েই যেন একজন শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিও আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষক-কর্মরীদের দ্রুত এমপিওভুক্ত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্মার্ট ওয়েবসাইট তৈরি করার নির্দেশনা দিতে হবে। ওয়েবসাইটে সব শিক্ষকের সব ধরনের তথ্য থাকতে হবে। সেখান থেকে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বৈঠকের পর জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সোনামনি চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়েবসাইট তৈরি করার নির্দেশনা দিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা জারি করবে। মাত্র চারটি কাগজ জমা দিয়ে যাতে এমপিও আবেদন সরাসরি করা যায়, সে ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর অনলাইনে সরাসরি আবেদন নেওয়ার জন্য নতুন করে ব্যবস্থা নেবে। ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিও আবেদন করবেন।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তি দূর করে এমপিওভুক্তি সহজকরণের নির্দেশনা দেন। নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।

এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, সংশ্লিষ্ট সব আঞ্চলিক পরিচালকসহ প্রায় ৫৬ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।