প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড অধরাই থেকে যাচ্ছে

আন্দোলন-কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি তুলে ধরলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বৈষম্য দূর হচ্ছে না খুব সহজে। এখনও প্রধান শিক্ষকরাই দশম গ্রেড পাননি। আর সে কারণে সহকারী শিক্ষকদের নবম গ্রেড পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তবে প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দিতে সরকারের মনোভাব ইতিবাচক। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়া হলে পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মর্যাদা পাবেন। যদিও প্রধান শিক্ষকরা আন্দোলন-কর্মসূচি দিয়ে দাবি করেছেন নবম গ্রেড।

শিক্ষকরা বলছেন, একই দেশে সমান যোগ্যতায় পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড দ্বিতীয় শ্রেণি। অথচ এখনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৩তম গ্রেড তৃতীয় শ্রেণি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ফলে এখনও প্রধান শিক্ষকরাই দশম গ্রেড পাচ্ছেন না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড কীভাবে হবে জানা নেই। তবে এই বৈষম্য চলতে পারে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বা জিডিপির ছয় শতাংশ বরাদ্দকে আদর্শ ধরা হয়। বিভিন্ন সময় সরকার বাজেট বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশেও এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে জানান শিক্ষকরা।

প্রাথমিকের শিক্ষকরা অভিযোগ করে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ২০১৯ সালে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক তথা দ্বিতীয় শ্রেণির করা হয়। অথচ তাদের বেতন ১৩তম গ্রেডে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় শ্রেণির মুখ দেখেনি, রয়ে গেছে তৃতীয় শ্রেণিতেই।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের নবম গ্রেড প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেড চাচ্ছেন। আমি বলেছি তাদের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু বাস্তবসম্মত নয়। এখন সবাই আমার পেছনে লেগেছেন। সদিচ্ছা থাকার পরও আমরা প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দিতে পারছি না।’

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু কাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং একই যোগ্যতা (স্নাতক) নিয়ে কারিকুলাম, সিলেবাস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দশম, আর প্রাথমিকের সহকারীদের ১৩তম গ্রেড। সমযোগ্যতায় অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট, হাইস্কুল, কলেজ, পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি অনেক পদ এখন দশম গ্রেড। এইচএসসি পাস ডিপ্লোমা ইন নার্সিং যোগ্যতায় দশম গ্রেডে রয়েছেন সিনিয়র স্টাফ নার্সরা। এসএসসি পাস ও কৃষি ডিপ্লোমা যোগ্যতায় দশম গ্রেডে রয়েছেন উপ-সহকারী বিভিন্ন কর্মকর্তা। পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে একই যোগ্যতার (স্নাতক) শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই কারিকুলাম, সিলেবাস পড়ানো হয়। অথচ পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেড। আর প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৩তম গ্রেডে। আবার উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করেই প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে ১১তম গ্রেড। শিক্ষকদের প্রতি এই আচরণ বৈষম্যমূলক।’

প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য নিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের ব্যানারে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষায় পরতে পরতে বৈষম্য। শিক্ষককে জাতি গড়ার কারিগর বলা হয়। কিন্তু সেই কারিগরদের যাপিত জীবনের মান কতটা জরাজীর্ণ সেটা নিয়ে ভাবার লোক খুব কম দেখেছি। সবাই শুধু মর্যাদায় সন্তুষ্ট রাখতে চায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তাই জাতি গড়ার অন্যতম হাতিয়ার শিক্ষকদের আর্থিক বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রয়োজন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর শিক্ষকদের বেতন কাঠামো আর আমাদের বেতন কাঠামোর মাঝে বিস্তর ব্যবধান। বিভিন্ন সেক্টরের পেশাজীবীদের রাতারাতি যদি গ্রেড পরিবর্তন হতে পারে, তাহলে সাধারণ শিক্ষকদের বেতন গ্রেড পরিবর্তনে বাধা কোথায়?