পাঠ্যবইয়ে মুগ্ধকে নিয়ে অসম্পূর্ণ তথ্য, যা বলছে এনসিটিবি

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ ভুল। আর মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়েও রয়েছে অসম্পূর্ণ তথ্য। মুগ্ধের নিহত হওয়ার তথ্যে লেখা হয়েছে ‘পানি বিতরণ করতে করতে মুগ্ধ নিহত হন’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভুল সংশোধনের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছি। অনলাইনে বই সংশোধন করা হয়েছে। যেসব বই এখনও ছাপা হয়নি সেখানে সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। যেগুলো ছাপা হয়েছে তার জন্য বিদ্যালয়গুলোতে সংশোধনী পাঠানো হচ্ছে শিগগিরই।’

২০২৫ সালের নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘গ্রাফিতি’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এই অধ্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের কথা রয়েছে। বইয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ জুলাই।

অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ নামে পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত প্রবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের পুলিশের গুলির সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আমার বাংলা বই’ পঞ্চম শ্রেণির এই বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শিরোনামে নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। এই লেখাটির মধ্যে মুগ্ধ কীভাবে মারা গেছেন সে তথ্য নেই। ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শিরোনামে লেখাটির শেষ অংশে উল্লেখ আছে, ‘সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন। নিহত হন নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অগণিত প্রাণ। মায়ের কোলের শিশু, বাবার সাথে খেলতে থাকা শিশু, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, চাকরিজীবী, মা, পথচারী কেউ বাদ যায় না। সারা দেশে হত্যা করা হয় হাজারো মানুষকে। আহত হন অসংখ্য মানুষ। তারা সবাই একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন। সবার অধিকার থাকবে এবং সবাই মিলেমিশে বাস করতে পারবে এমন একটা দেশের জন্যই তারা শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের কখনো ভুলবো না।’

মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন– এই তথ্যের বিষয়ে খোঁজ নিলে সংশ্লিষ্টরা জানান, মুগ্ধ আহত হয়ে মারা গেছেন বা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, সেই তথ্য নেই। পানি বিতরণ করতে করতে মারা গেছেন তথ্যটি অসম্পূর্ণ। কারণ সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী ‘মুগ্ধ নিহত হয়েছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে’।

অন্যদিকে ‘নিহত হন নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অগণিত প্রাণ’ এ তথ্যও অসম্পূর্ণ বা আংশিক। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে প্রথম ধাপের চূড়ান্ত তালিকায় শহীদ ৮২৬ জন এবং আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৩০৬ জন। যদিও তালিকা তৈরি বিষয়টি চলমান। সংশ্লিষ্টরা জানান, সেই হিসাবে নিহত হওয়ার সংখ্যা অগণিত বলার সুযোগ নেই। গোনা যাবে না এমন নয়। গাণিতিকভাবে ভুল শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে, যা ঠিক হয়নি।