আম্মা আর বলেন না- বাবা যাই না আসি...

কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর ও তার মা

জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাসা থেকে বেরুলেই আম্মাকে জানিয়ে যেতাম। বলতাম এভাবে- 'আম্মা বাইরে যাই’। আম্মা বলতেন- 'যাই না বাবা, বলতে হয় আসি। আল্লাহর হাতে সোপর্দ!'

প্রতিটি সময় ইচ্ছে করেই ভুলটা করতাম, আম্মা প্রতিবারই একই কথা বলতেন। আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিলো হংকংয়ে। একটা বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুলের ফান্ড রাইজিংয়ের চ্যারিটি শো। ঢাকায় যতই কাজ থাকুক, আম্মাকে সালাম না করে বিদেশে কখনও যাইনি। আবারও বলতাম আম্মা যাই। আম্মা আবারও বলতেন- যাই না বাবা আসি, আল্লাহর হাতে সোপর্দ…।

তিনি মারা গেছেন প্রায় তিন বছর হতে চললো। আম্মা বেঁচে থাকতে বাসায় রাতে থাকতাম না, কারণ আমি নিশাচর। রাত দশটার মধ্যে লাইট বন্ধের সামরিক শাসন ছিলো আম্মার। পরের দিকে অবশ্য এই ব্যাপারগুলো আম্মা ছাড় দিয়েছেন। এখন কুমিল্লা গেলে আম্মার রুমের বিছানায় ঘুমাই। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় খাটের দিকে তাকাই, তারপর উপরে তাকিয়ে বলি- আম্মা যাই। আম্মা আর বলেন না- বাবা যাই না আসি, আল্লাহর হাতে সোপর্দ।

কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর ও তার মা

হাসপাতালে মারা যাওয়ার দুদিন আগে আম্মার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তিনি আমাকে দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন। কাগজ কলম নিয়ে লিখতে চাইলেন, পারলেন না। রাগী মানুষ আম্মা, উত্তেজিত হয়ে গেলেন। ডাক্তার সাহেবের মায়া হলো, তিনি মুখ ও গলার পাইপ খুলে দিলেন। আম্মা আমাকে জোরে চেপে ধরে বললেন, এখানেই আমার বিচার হবে, তারপর ঠাণ্ডা হলেন। এবার বললাম আম্মা আসি, অপলক তাকিয়ে রইলেন। কবরস্থানে দাফন করে বের হওয়ার সময় আবার বললাম- আম্মা যাই। কানে বেজেই চলছে আম্মা বলছেন- বাবা যাই না আসি, আল্লাহর হাতে সোপর্দ।

/এমএম/এনএ/