পরে সে পরিচয় ছাপিয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন অর্ণবের গাওয়া অনবদ্যসব গীতিকবিতায়। শৈশব থেকেই কণ্ঠে ছিল গান। তবে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ থেকে তার পরিচয়ে আমূল পরিবর্তন ঘটে। এদিন ঢাকার বেঙ্গল মিউজিক প্রকাশ করে তার কণ্ঠে প্রথম অ্যালবাম ‘নতুন করে পাবো বলে’।
পেয়েছেনও। সাহানার ভাষায়, ‘চাওয়ার চেয়েও বেশি পেয়েছি তখন।’
হ্যাঁ, তাই তো। গেল দশ বছরের তালিকা টানলে তিনিই এখনও দুই বাংলার অন্যতম রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। অন্যতম মানে, রবীন্দ্র গানে যে ক’জন মানুষ শুদ্ধস্বরে-সুরে-সংগীতে বৈচিত্রের প্রলেপ দিয়েছেন তাদের প্রথম ভাগে আছেন তিনি।
লাগারই কথা। এরমধ্যে সুতো কেটেছে সাহানার সুরে-সংসারে। ঢাকা পড়েছে ঢাকার জীবন কাটা পড়েছে স্বপ্ন-স্বস্তি। অতঃপর ব্রিটেনের এমফিল স্কলারশিপ সিঁড়ি ধরে তার বাংলাত্যাগ (ঢাকা-কলাকাতা) অথবা নতুন যাত্রা।
সাহানা বলেন, ‘আসলে তখন আমি একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজেকে টেনে নিয়েছি। বাংলাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবেসেও ছেড়ে গেছি। গেছি মানে বাধ্য হয়েছি। অনেক স্ট্রাগল করেছি পরবাসে। যেটা না করলে আজকের পরিণত সাহানাকে পেতাম না। এখন আমি বেশ থিতু, স্থির। তাই তো দু’বছর ধরে বার বার ফিরে আসছি। গান বাঁধছি, গাইছি।’
ছোট্ট রাজকন্যা রোহিণীর হাত মুঠোপুরে বাংলায়-গানে ফিরে আসছেন ঠিকই। যদিও সেই ফেরা থেমে গেছে ওই বাংলায়, শৈশব শেকড়ে শান্তিনিকেতনে। গেল একমাস টানা রেকর্ডিং করছেন নতুন অ্যালবামের। অসহায় প্রশ্নের নামে গানগুলোর নাম দিয়েছেন ‘মন বান্ধিবি কেমনে’?
বোলপুরে বসে এই প্রশ্নের গভীরে সাহানা কতটা গিয়েছেন ডুবে, সেটি ঠিক বোঝা গেল না পিসি মনিটরে ওয়েবক্যাম ছিল না বলে। বাংলিশ টাইপিংয়ে একটু করে শুধু বললেন, ‘জুলাইয়ের শেষ দিকে শান্তিনিকেতন এসেছি। রেকর্ডিং নিয়ে মহা ব্যস্ত এখনও। ঢাকায় যাব না, তা নয়। এমন কোনও দিব্যি নেই! তবে এখনও নয়। যাব হয়তো; কখনও।’
ঢাকায় ফেরা প্রসঙ্গে সাহানার চকচকে চোখ হয়তো লক্ষ্যহীন দূর ঝাপসা। তবে এটুকু নিশ্চিত করেছেন তার তৃতীয় একক ‘মন বান্ধিবি কেমনে’ কলকাতার হিন্দুস্থান রেকর্ডস থেকে প্রকাশ পাচ্ছে ২৭ সেপ্টেম্বর। সাহানা আপাতত না আসুক, না হোক এই শহরে তার তৃতীয় প্রকাশনা; তার গানে-প্রাণে ঠিকই থাকছে ঢাকা তথা বাংলাদেশ। এবারের অ্যালবামে তিনি কণ্ঠে তুলেছেন লালন সাঁই আর শাহ আব্দুল কারিমের গান।
সুন্দর শৈশব স্মৃতি হাতড়ে আরও বলেন, ‘‘সেই শৈশব থেকে শান্তিনিকেতনের বাউল দাদাদের কাছে লোকগান শিখেছি। মঞ্চে বরাবরই রবীন্দ্রর পাশাপাশি লোকগান করে আসছি। শায়ান (অর্ণব), আনুশেহ, বুনোদের নিয়ে শান্তিনিকেতনে ‘বাংলা’ ব্যান্ড করেছি। সেটির হয়ে গেয়েছি প্রচুর। ফলে লোকগান আমাকে শৈশব থেকেই জড়িয়ে রেখেছে। এ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা করবেন না। ঘুমের ক্ষতি হবে।’’
সবমিলিয়ে নতুন অ্যালবাম ও তার বর্তমান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাজপেয়ী বলেন, ‘দেখুন এটা আমার জন্য আমার গান গাওয়ার পথে স্বাভাবিক পরিণতি। নাথিং আউট অব বক্স। এটা ঠিক, অন্য দুটির মতো এটিও যদি বাংলাদেশে প্রকাশ পেতো- তবে ভালোই লাগতো। এই ভালোলাগা ভাষার জন্য, অন্য কিছু নয়।’