বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি: গান কী দেখার না শোনার

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি: গান কী দেখার না শোনারঅনুষ্ঠিত হলো বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি। বিষয় ছিল- ‘গান কী দেখার না শোনার’। দেশের সংগীতজ্ঞ, গবেষক, শিল্পী, গান প্রচার ও প্রসারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেছেন এই বৈঠকিতে।

মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় এই বৈঠকিতে গীতিকবি ও গবেষক মোহাম্মাদ রফিকউজ্জামান ছাড়াও অংশ নেন সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী, এমআইবি প্রেসিডেন্ট ও লেজার ভিশনের প্রযোজক এ কে এম আরিফুর রহমান, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও ইমরান, নির্মাতা চন্দন রায় চৌধুরী, টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান রবির কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট-এন্টারটেইনমেন্ট ম্যানেজার জ্যাকলিন এলিজাবেথ মজুমদার, রেডিও ফুর্তির স্টেশন ম্যানেজার ও প্রোগ্রাম অ্যান্ড আর্টিস্ট পিআর সার্জিনা ইসলাম এবং বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।

বলছেন ফাহমিদা নবীআজকের বিষয় প্রসঙ্গে শুরুটা করেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। বলেন, ‘আমাদের সময়ে যখন টেলিভিশন মিডিয়া ছিল না। আমরা তখন অনুষ্ঠানে-আসরে গিয়ে গান শুনতাম। আর টেলিভিশন আসার পর আমরা গানের অনুষ্ঠান দেখতাম। তবে বরাবরই গান শোনার বিষয়টিই মুখ্য ছিল।’এ কে এম আরিফুুর রহমান

তিনি মজা করে আরও বলেন, ‘কবিগুরু গানে গানে বলেছেন- তোমায় গান শোনাব। তিনি কখনও বলেননি, তোমায় গান দেখাব! তাই অবশ্যই গান শোনার বিষয়।’

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি: গান কী দেখার না শোনারবৈঠকিতে প্রশ্ন উঠেছিল রেডিওতে কীভাবে গানটা মূল্যায়ন করা হয়? উত্তরে উপস্থিত অতিথি আরজে সার্জিনা বলেন, ‘আমরা প্রথমে গান শুনি। তারপর প্রচার করি। সুর শুনি, কথা শুনি; তারপর।’

এমন প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক ও গীতিকবি জুলফিকার রাসেল রেডিওতে গান প্রচার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেন। রেডিও ফুর্তির স্টেশন ম্যানেজার ও প্রোগ্রাম অ্যান্ড আর্টিস্ট পিআর সার্জিনা আরজে সারজিনকে বলেন আপনারা অনেক গান প্রচার করেন, যা আসলেই কি প্রচারযোগ্য? আপনাদের দায়িত্ব কি শুধুই প্রচার? শিল্পীদের গানটি প্রচারের আগে আপনারা কি অনুমতি নেন? তাদের সম্মানী দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন?

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানউত্তরে আরজে বলেন, ‘আসলে এখনে সমন্বয়ের অভাব। এ বিষয়ে যদি একটি বোর্ড থাকে, যারা শিল্পীদের সম্মানীর বিষয়টি দেখভাল করবেন, তাহলে সম্ভব।’

এতে সংগীতশিল্পী বাপ্পা তাকে সমর্থন করেন। বলেন, ‘এটা জরুরি। আমরা নিজেদের কমন ইন্টারেস্টের জায়গায় এক নই।’ এরপর তিনি একই প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিন্তু রেডিওগুলো যা করছেন তা মোটেও ঠিক নয়। তারা অধিকাংশ সময় গান প্রচারের আগে অনুমতি পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। এটা অসম্মানজনক। আসুন আমরা সবাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। সমাধানে আসার চেষ্টা করি।’

আরজে সারজিনাএরপর সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা বেশ কৌতুহল নিয়েই প্রশ্নটা করলেন, আপনারা যারা ভিডিও নির্মাণ করছেন তাদের কাছে কী মনে হয়- গান দেখার না শোনার বিষয়?

জবাবে ভিডিও নির্মাতা চন্দন রায় বলেন, ‘অবশ্যই এটা শোনার বিষয়। এতে আমার দ্বিমত নেই। ভিডিও হচ্ছে যে কোনও গান প্রচারণার একটি মাধ্যম। ভিডিওটা যখন নির্মাণ করছি তখন গানটির সঙ্গে নতুন একটা মাত্রা যোগ করছি।’

বলছেন সম্পাদক ও গীতিকবি জুলফিকার রাসেল
সম্প্রতি ইমরানের একটা গান ইউটিউবে এক কোটিবার দর্শকরা দেখেছেন। এর আগেও তার একটি গানে এমন রেকর্ড হয়েছে। প্রশ্ন উঠে ভিউ মানেই কি হিট?

এ প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘ভিডিওটা শুধুই প্রচারণার মাধ্যম। এখন গান শোনার মাধ্যম কনভার্ট হয়ে গেছে। গান শোনানোর জন্যই এটি (ইউটিউব) ব্যবহার করা হয়। আর ভিউ বেশি হলেই তা হিট নয়। আমি এটা মনে করি না। একটা গান ১ কোটি ভিউ হলেই যে টিকে থাকবে, তা নয়। সংগীত, কথা, ভিডিও- সবমিলিয়ে প্রশংসিত হলে তবে আমি সন্তুষ্ট। তবে অনেকে প্রশংসা করলে ভালো লাগে।’

বৈঠকিতে কথা বলছেন ইমরানএরপর মূল প্রসঙ্গে ফিরে সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী মিউজিক ভিডিওর পরিমিতিবোধ নিয়ে কথা বলেন। তার ভাষ্য, ‘মেঘলা দিনের একটি গান বাজানো হচ্ছে, ভিডিওতে দেখানো হলো খোলা আকাশের নিচে গাড়ির টায়ার! মেঘলা দিনের সঙ্গে টায়ারের সংযুক্তি কোথায়? এছাড়া ভিডিও নামে যে পরিমান অশ্লীলতা জমা হচ্ছে, তার জন্য সেন্সর বোর্ড প্রয়োজন!’

এই বৈঠকি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ সরাসরি সম্প্রচার করেছে আজ (১১ মার্চ) বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে ১টা পর্যন্ত।

চন্দন রায় চৌধুরীছবি: সাজ্জাদ হোসেন
/এম/এমএম/