‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র বিরুদ্ধে ঈগলসের মামলা!

অভিযুক্ত হোটেল ক্যালিফোর্নিয়াসত্তর দশকে প্রকাশিত দ্য ঈগলস ব্যান্ডের কালজয়ী গান ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ আজও সমান জনপ্রিয়। এই গানের শ্রোতা দুনিয়াজোড়া। তবে বাস্তবের কোনও হোটেল নিয়ে গানটি করেননি তারা। অথচ মেক্সিকোতে এমন একটি হোটেলের খোঁজ মিলেছে। নাম ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ হওয়ায় গানটির রেশ ধরে এটিকে ঘিরে পর্যটক ও অতিথিদের আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।

এ খবর কানে যেতেই হোটেল মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে গত ১ মে লস অ্যাঞ্জেলেস ফেডারেল কোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছেন ঈগলসের সদস্যরা। অনুমতি ছাড়াই ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ নামটি ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে ব্যান্ডটি। তাদের দাবি, গানটির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই মেক্সিকোতে ব্যবসা করছে হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া।
ঈগলসের অভিযোগ, তোদোস সান্তোস শহরের ১১ ঘর বিশিষ্ট হোটেলটির সঙ্গে ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানের ও ব্যান্ড ঈগলসের সম্পৃক্ততা আছে উল্লেখ করে অতিথিদের এখানে থাকতে উৎসাহিত করে আসছে মালিক পক্ষ।
এছাড়া হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া নামে সেখানে টি-শার্ট ও অন্যান্য সামগ্রীও বিক্রি করা হচ্ছে দেদার। এর অংশ হিসেবে ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’সহ ঈগলসের অন্যান্য গান বাজানো হয়ে থাকে হোটেলের লবিতে। কর্তৃপক্ষ ভেন্যুটিকে ‘কিংবদন্তি’ হিসেবেও দাবি করেন।
এসব কারণে অনেক অতিথির মধ্যে তৈরি হয়েছে দ্বিধা। তাই অনলাইনে তারা এ নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন। তখন বিষয়টি নজরে পড়ে ঈগলস সদস্যদের। তারা আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মালিক পক্ষ ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ নামটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল।
মামলায় কপিরাইট লঙ্ঘনের কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়েছে ঈগলস। ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ নাম থেকে শুরু করে নিজেদের কোনও গান যেন হোটেলটিতে না বাজানো হয় এবং তাদের নাম ব্যবহার করে যে কোনও কিছু বিক্রিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেছে ব্যান্ডটি। তারা এজন্য সব ধরনের লভ্যাংশ ও ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। এ বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ কিংবা তাদের আইনজীবীদের কেউই কোনও মন্তব্য করেননি এখনও।
দ্য ঈগলসযদিও তোদোস সান্তোস শহরের ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ প্রথম চালু হয় ১৯৫০ সালে। ২০০১ সালে কানাডিয়ান দম্পতি জন ও ডেবি স্টুয়ার্ট কিনে নেওয়ার আগে বেশ কয়েকবার এর নাম পরিবর্তন হয়। এখন আবার ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ নামটি বিপণনে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে।
১৯৭৬ সালে ঈগলস ব্যান্ড ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ নামের একটি অ্যালবাম বের করে। এর শিরোনাম গানটি ১৯৭৭ সালের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে রেকর্ড অব দ্য ইয়ার পুরস্কার জেতে।
ডন ফেল্ডার ও জো ওয়ালশের দীর্ঘক্ষণ বাজানো গিটারের সুর ও ডন হেনলির গাওয়া জটিল কথার জন্য ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানটি সুপরিচিত। গত বছর সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হেনলি বলেন, ‘এই গান হলো অবুঝ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করার পথে একটি যাত্রা। এটি ক্যালিফোর্নিয়া বিষয়ক নয়। এতে আসলে গোটা আমেরিকার কথাই বলা হয়েছে।’
নির্দিষ্ট কোনও স্থানকে ঘিরে ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানটি না করায় অ্যালবামের প্রচ্ছদে দ্য ঈগলস ব্যবহার করে বেভারলি হিলস হোটেল। কিন্তু তারা অনুমতি নেননি! এ কারণে ঈগলসকে পড়তে হয়েছিল মামলার গ্যাঁড়াকলে। যদিও অ্যালবামটি সাড়া ফেলার পর বুকিং তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ মামলা প্রত্যাহার করেন।

‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানটি:

সত্তর দশকের সবচেয়ে সফল ব্যান্ড দ্য ঈগলসের জনপ্রিয় গানের মধ্যে আরও রয়েছে ‘ডেসপারেডো’ ও ‘টেক ইট ইজি’। শুধু আমেরিকাতেই তাদের অ্যালবামের তিন কোটি কপি বিক্রি হয়েছে।
গত বছর দ্য ঈগলসের গিটারিস্ট ও গায়ক গ্লেন ফ্রে (৬৭) মারা যান। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ২০১৬ সালের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের মঞ্চে হাজির হয় ব্যান্ডটির অন্য সদস্যরা। তখনই তারা ঘোষণা দেন, আর কখনও সংগীত পরিবেশন করবেন না।

সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি
/জেএইচ/এমএম/