কান উৎসবের ৭০তম আসর শুরুর আগের দিন থেকে রোজ ট্রেনে চড়ে সেন্ট রাফায়েলে যাতায়াত করছি। আধঘণ্টা পরপরই বাস বা ট্রেন ছাড়ে এবং আসে এখানে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়, প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের শিডিউলে যে সময় উল্লেখ করা থাকে, তা এক মিনিটও এদিক-ওদিক হয় না। ১০টা ৪৪ মানে ১০টা ৪৪, ১১টা ১৫ মানে ১১টা ১৫।
শুধু ট্রেন না, পামবাসগুলোও ঘড়ি ধরে চলে। গার দো কান লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে ডিজিটালি সময় দেওয়া থাকে। ৮টা ১৫ মানে ৮টা ১৫, ৯টা ৪৫ মানে ৯টা ৪৫। যথাসময়ে বাস ছাড়ে এবং আসে। এই সময়ানুবর্তিতা অবাক করার মতো।
এখানকার সবকিছুই চলে ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী। প্রতিদিন সকালে প্রথমে রেডিওতে আড্ডা দেন প্রতিযোগিতা বিভাগের তারকারা। তারপর যান ফটোকলে। সেখান থেকে সংবাদ সম্মেলন। সবই সময় মেনে। উৎসবের প্রতিদিনকার সময়সূচিতে উল্লেখ করা সময়েই শুরু হয় সব ছবির প্রদর্শনী। এক মিনিটও নড়চড় হয় না।
উৎসবে একটার পর একটা ইভেন্ট আছেই, তার ওপর প্রতিদিনই ঘটছে নানান ঘটনা। কোনও লেখা জমিয়ে রাখলে দেখা গেলো একে একে জমে যাচ্ছে পাহাড়! তাই যতটা সম্ভব একটা অনুষ্ঠান শেষ হলেই লিখে পাঠিয়ে দিচ্ছি ই-মেইলে। নয়তো আধেক লিখে কাজ এগিয়ে রাখছি।
কান থেকে সেন্ট রাফায়েলে যাওয়ার বাসও নেই। একমাত্র উপায় ট্যাক্সি। কিন্তু ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখলাম ভাড়া আসবে ২০০ ইউরোর মতো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ হাজার টাকা! নিজের দেশের টাকার অঙ্ক মনে পড়ে যাওয়ায় ট্যাক্সির চিন্তা বাদ দিলাম। সঙ্গে আছেন ছবিয়াল আহামেদ ফরিদ। আপাতত কান লা-বক্কা পর্যন্ত যে ট্রেন যাবে সেটাতে ওঠার মনস্থির করলাম।
৪০ মিনিট হাঁটার পর পৌঁছলাম মান্দালিউ লা-ন্যাপোলে। এখানে পালম্যান নামে পাঁচতারা একটি হোটেল আছে ক্যাসিনোসহ। ওই হোটেলের সামনে জিরিয়ে নিতে বসলাম। তারও আধঘণ্টা পর ত্রাতা হয়ে গাড়ি নিয়ে এলেন প্রবাসী তরুণ মাহবুবুর রহমান। মাঝে তাকে ট্রেন মিস করার কথা জানিয়ে রেখেছিলাম। বাংলাদেশির প্রতি টান থেকে তিনি ছুটে এলেন।
প্রায় আধঘণ্টা অনেক গতিবেগে চলার পর সেন্ট রাফায়েলে এসে থামলো আলির গাড়ি। নেমে ভাবছিলাম, ট্রেন মিস হওয়ায় কি ধকলটাই না গেলো। লালন সাঁইজি তো আর এমনি এমনি বলে যাননি, ‘সময় গেলে সাধন হবে না!’
/জেএইচ/এমএম/