স্বর্ণপাম জয়ের পর সুখের চেঁচামেচি!



unnamedআঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ রেখে দু’হাত ওপরে তুলে মৃদু ঝাঁকিয়ে রুবেন অস্টলুন্ড জানিয়ে দিলেন বিশ্বজয়ের বার্তা। এরপর মঞ্চে উঠে হাত-পা ছড়িয়ে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে গেলেন স্প্যানিশ নির্মাতা পেদ্রো আলমোদোভারের দিকে। জড়িয়ে ধরলেন তাকে। বাদ পড়েননি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ।

এরপর অন্য পাশে দাঁড়িয়ে বিচারকদের দিকে ধন্যবাদের চুম্বন ছড়িয়ে দিলেন গুনে গুনে ছয়বার। মাইক্রোফোনের সামনে অনুভূতি জানাতে গিয়ে হাঁটুতে দুই হাত রেখে ভর দিলেন অন্তত ছয়বার। তিনি আসলে কি করছিলেন তা হয়তো নিজেই বুঝতে পারছিলেন না! একই সঙ্গে তাজ্জব আর অভিভূত হয়ে গেলে যা হয়!
আবেগাপ্লুত হয়ে কখনও দুই হাত মিলিয়ে বুকের কাছে এনে অনুভূতি জানিয়েছেন রুবেন অস্টলুন্ড। একাধিকবার দুই হাত মাথায় রেখে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, এবারের স্বর্ণপাম জয়টা তার কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। সব মিলিয়ে ৪৩ বছর বয়সী এই সুইডিশ নির্মাতার শারীরিক ভঙ্গি ছিল মনে রাখার মতো।
ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল কানে স্থানীয় সময় ২৮ মে রাতে পালে দো ফেস্টিভাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ঘোষণা করা হয় স্বর্ণপাম জিতেছে রুবেন অস্টলুন্ড পরিচালিত ‘দ্য স্কয়ার’। নিজের এই জয় গরম গরম উদযাপনের জন্য কিছু করতে চান বলে জানালেন লুমিয়েরে উপস্থিত অতিথিদের। রসিকতার সুরে তিনি তখন বলেন, ‘আমি স্বর্ণপাম জিতেছি। তাই আপনাদের সবাইকে পরিচালনা করতে পারি!’
এমনিতে রুবেন অস্টলুন্ডকে দেখলে মনে হয় অস্থিরতার কারখানা! গালভর্তি দাড়ি। দেখতে সুদর্শন। তবে ক্যামেরার সামনের নায়ক নন। ক্যামেরায় চোখ রেখে জিতেছেন বিশ্বজয় করার মতো পুরস্কার। পরিচালনায় মেতে উঠলেন কান উৎসবের ৭০তম আসরের সমাপনী মঞ্চে এসেও।
রুবেন অস্টলুন্ড, পেছনে পেদ্রো আলমোদোভার ও জুলিয়েট বিনোশতাই মঞ্চের সামনে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আলোকচিত্রীদের ঘুরে অতিথিদের দিকে ক্যামেরা তাক করতে বলেন রুবেন। তারা ঘোরার পর ‘থ্রি, টু, ওয়ান’ বলেই খুশিতে চিৎকার দেন তিনি। তার সঙ্গে বাঁধভাঙা খুশি হওয়ার মতো সজোরে চেঁচালেন সব অতিথি। সবশেষে উৎসব আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে চোখ বুজে দুই হাত দু’দিকে প্রসারিত করে তিনি জানিয়ে দিলেন, সিনেমার বৈশ্বিক আসর কানের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার পেলে বহিঃপ্রকাশটা এমনই হয়।
খুশিতে ইচ্ছেমতো চেঁচানোর দৃশ্য আছে রুবেন অস্টলুন্ড পরিচালিত ‘দ্য স্কয়ার’-এ। শিল্পকলা বিষয়ে বিদ্রুপাত্মক ছবিটির মূল অভিনেতা ডেনমার্কের ক্লেইস ব্যাং। তার চরিত্রের নাম ক্রিশ্চিয়ান। সে একটি শিল্পালয় মানে গ্যালারির পরিচালক। নিজের শিল্পালয়ের সাফল্যের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে লোকটা। তাই গ্যালারির চত্বরে আয়োজন করে ‘দ্য স্কয়ার’ নামের একটি ইনস্টলেশন। এর অংশ হিসেবে জাদুঘরের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য আয়োজিত ডিনারে টেবিল থেকে টেবিলে গিয়ে বনমানুষের ভূমিকায় অভিনয় করে একজন পারফর্ম্যান্স আর্টিস্ট। কিন্তু এ কারণে তৈরি হয় উদ্ভট, উৎকণ্ঠা এবং শেষ অবধি সহিংস হয়ে ওঠা পরিস্থিতি।
‘দ্য স্কয়ার’-এর ব্যাপ্তি ২ ঘণ্টা ২২ মিনিট হলেও প্রযোজকের সহযোগিতা পেয়েছেন জানিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে রুবেন অস্টলুন্ড বলেন, ‘আমার মনে হয়, তুমিই একমাত্র প্রযোজক যে ছবিটির প্রদর্শনীর পর বলেছো, আমরা ছবিটির দৈর্ঘ্য আরও বাড়াতে পারি!’

‘দ্য স্কয়ার’-এর উল্লেখযোগ্য একটি ক্লিপ:


কান উৎসবের ৭০তম আসরের সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রুবেন অস্টলুন্ড সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ‘সম্ভবত আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ও মাই গড, কী দারুণ! এরপর আমার ছবির মূল অভিনেতাকে জড়িয়ে ধরেছি। আমরা প্রায় দুই বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। কাজটা শেষে অবশ্যই খুব সন্তুষ্ট ছিলাম।’
ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ তারকা ডমিনিক ওয়েস্ট, ‘ম্যাড মেন’ তারকা এলিজাবেথ মস। কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শনের পর এটি প্রশংসিত হলেও স্বর্ণপামের জন্য ফেভারিট ছিল না। কারও মনেই হয়নি সুইডেনে যাচ্ছে পাম দ’র!
এর আগে চারটি ছবি পরিচালনা করেছেন রুবেন অস্টলুন্ড। তবে তার আগে হাত পাকিয়েছেন বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়ে। কানে এর আগে আনসার্তেন রিগার্দ বিভাগে ২০১৪ সালে জুরি প্রাইজ পায় তার ‘স্নো থেরাপি’। এছাড়া ২০০৮ সালে ‘হ্যাপি সুইডেন’ ও ২০১১ সালে ‘প্লে’ স্থান পায় এ উৎসবে।
এবার পেদ্রো আলমোদোভারের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বিচারক প্যানেলের মন কেড়ে জিতলেন উৎসবের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার স্বর্ণপাম। সেই সঙ্গে তার নাম উঠে গেলো বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যরকম উচ্চতায়।
(বাঁ থেকে) জুলিয়েট বিনোশ, রুবেন অস্টলুন্ড ও পেদ্রো আলমোদোভার/জেএইচ/এমএম/