'নিউজ আওয়ার এক্সট্রা'

তবে কি অপপ্রচারের শিকার কল্যাণ কোরাইয়া ?

18951316_10211268175712635_7981217026487871903_nপারসেপশন বা অনুমান থেকে আমরা অনেক কিছুই ধারণা করে ফেলি। এটা মানুষের মধ্যকার এক ধরনের ক্ষমতা বলা যায়। এ ক্ষমতার গুণে মানুষ অনেক কিছুই মানুষের সম্পর্কে ভেবে নিয়ে থাকে। আর এই জায়গাতেই পারসেপশন আর কনসেপশনের বিশাল ফারাক।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রতিদিনের আয়োজন নিউজ আওয়ার এক্সট্রায় আজকের আলোচনার বিষয় ছিল ‘পারসেপশন’। মুন্নি সাহার সঞ্চালনায় আজকের নিউজ আওয়ার এক্সট্রায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম , অভিনেত্রী সোহানা সাবা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সাহাব এনাম চৌধুরী, অনলাইন একটিভিস্ট ও গণজাগরণ কর্মী মারুফ রসুল, এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন, অভিনেতা কল্যাণ কোরাইয়া, কল্যান কোরাইয়ার বন্ধু রসি, এটিএন নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক সামদানী হক নাজুম।

কল্যাণ কোরাইয়াগত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির উল্টো দিকের রাস্তায় গাড়ি চাপায় গুরুতর আহত হন প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া এ ঘটনায় প্রথম আলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মেজর (অব.) সাজ্জাদুল কবীর অভিনেতা কল্যাণ কোরাইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন ১০ জানুয়ারি রাতে কলাবাগান থানা পুলিশ কল্যাণ কোরাইয়াকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে জিয়াকে গা‌ড়ি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ আনা হ‌য়। এ বিষয়ে  অভিযুক্ত কল্যাণ কোরাইয়া  এটিএন নিউজের অনুষ্ঠানে বলেন, সেদিন রাতে আমার গাড়ি বিজয় স্মরণির মোড়ে এক রড বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ড্রাইভিং সিটে আমি নিজেই ছিলাম, আমার পাশের সিটে ছিলেন আমার বন্ধু রসি। এই ঘটনায় সে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি পরে তার খোঁজে ঢাকা মেডিকেল যাই সেই রাতেই। আমি জানতাম না সেই রাতেই প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ভাইও দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। আমি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে আমার বন্ধুর খোঁজ করতে থাকি। আমি কোন সাংবাদিকের কাছে দুর্ঘটনার ব্যাপারে কিছুই বলিনি।  

18582326_10154807626211429_6930123746987401568_nঅভিনেত্রী সোহানা সাবা বলেন এই ঘটনা যেদিন ঘটেছে আমি নিজেও সেদিন শুনিনি। আমি পরে জানতে পারি। ইরফান ভাই আমাকে পুরো ঘটনা বলছে। আমরা সব শিল্পী এক হয়ে কল্যাণের সাপোর্টে ছিলাম কারণ আমরা জানতাম সত্যিটা কি। আমার স্ট্যাটাসে লোকজন আমাকে ইচ্ছামত গালিগালাজ করে। আমি নিতে পারিনি। কল্যাণ সেদিন মাতাল ছিলনা। সাইদীকে চাঁদে দেখা গেছে আর কল্যাণ মদ খেয়েছে দুইটা একই ধরনের ঘটনা। এটা একটা মহল রটিয়েছে। প্রথম আলোর কাছে বিষয়টি বলা হয়েছে, তারা বিষয়টি দেখার কথা বলে। তবে তারা কি দেখছে আমরা এখনও জানিনা।

এটিএন নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক সামদানী হক নাজুমের  একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয় কিভাবে কোথায় দুর্ঘটনার শিকার হন কল্যাণ কোরাইয়া। প্রতিবেদক বলেন এই বিষয়টা নিয়ে একটা স্বনামধন্য পত্রিকার কাছ থেকে যেমনটা সাড়া পাওয়ার কথা আমরা পাইনি। অভিযোগ প্রথম আলোর কাছ থেকেই এসেছিল সেখানে উল্লেখ ছিল কল্যাণ এর নাম, লেখা ছিল কল্যাণের গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। আমরা তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি, তার মতে বি আর টি এ’র একজন পরিদর্শক দেখে গিয়েছেন কিন্তু এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি।

18951124_10211268174272599_1617087956746318755_nঅনুষ্ঠানের মাঝে এক প্রত্যক্ষদর্শী ফোনো লাইভে জানান  সেদিন রাতে তার রডের গাড়ি আসার কথা ছিল সেই গাড়ির সাথেই ধাক্কা লাগে কল্যাণ করাইয়ার। তার কাছে গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা গেলেও তিনি এই একই কথা জানান।        

ব্যরিস্টার তানজিব উল আলম  বলেন এই ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা হওয়ার কথা। জামিন অযোগ্য অপরাধ এটি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে নির্ভর করে কোন ধারায় মামলাটি হয়েছে। এফআইআর পরের দিন হয়, এর আগেই সব ছড়িয়ে পরে। জিয়ার এক্সিডেন্ট খুব আগ্রহ জাগিয়েছে মানুষের মনে। দুই দিকেই সেলিব্রেটি। যিনি ভিক্টিম তিনিও একজন মিডিয়ার লোক যার নামে মামলা সেও। এ ধরনের মামলাকে হাই প্রোফাইল মামলা বলা হয় এবং এদের উপর বিশেষ নজরদারি থাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের।

দুর্ঘটনায় আহত কল্যানের বন্ধু রসি বলেন, আমি আহত হই তেজগাঁও থানার একটু আগে, কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বলা হয় ড্রেসিং করতে পারবে কিন্তু স্টিচ করতে হবে ঢাকা মেডিকেলে। তার নিকট আত্মীয় তাকে সি এন জি তে করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায়। এর পর কয়েকদিন আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। পুলিশ এসেছিল ইন্টারভিউ নিতে। আমাকে ভিডিও করে এবং চলে যায়।

অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও গণজাগরণকর্মী মারুফ রসুল বলেন, আমার কাছে  মনে হয় পারসেপশন থেকে কোনও কিছু করা এটা একটা স্ট্র্যাটেজি। এই ক্ষেত্রে একটা শ্রেণি কাজ করে। তারেক মাসুদের ঘটনা যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল মিরসরাইয়ের ঘটনা তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি।

পারসেপশনের যে রাজনীতির যে শিকার মানুষ হচ্ছে তা অস্বীকার করা যাবেনা। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভুল স্বীকার করার প্রবণতা আমাদের নেই । ভুল হলে বলতে হবে। আমরা ইগো নিয়ে বসে থাকি। 

/এফএএন/