টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন হয়ে থাকে। অন্যদিকে পকেটে পকেটে মোবাইল ফোনে সিনেমা এবং পাইরেসির কারণে দেশের সিনেমা হলের ব্যবসা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এখন হলগুলোতে দর্শক শূন্যের কোঠায়, ফলে হল মালিকদের প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান। আর শত শত কর্মচারী বেকার হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এমন তথ্যই উঠে এসেছে হল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে।
নওগাঁর ১১টি উপজেলার ১৩টি সিনেমা হলে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল শতাধিক। তার মধ্যে নওগাঁ শহরেই ছিল ৩টি সিনেমা হল। এগুলো হলো- তাজ, রুবি ও মুক্তি সিনেমা। এরই মধ্যে একমাত্র তাজ সিনেমা হলটি চালু রয়েছে। বাকি দুটি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে উপজেলার সিনেমা হলগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ। যেগুলো চালু আছে তাও লোকসান দিয়ে চলছে।
তাজ সিনেমা হলের মালিক পরিতোষ সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমা এখন মান সম্পন্ন নয়। চলচ্চিত্র নির্মাণকারীরা দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারছে না বিধায় দর্শক হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে এখনও ভালো চলচ্চিত্রের দর্শক আছে। তারা ভালো ছবি পেলে হলে এসে ছবি দেখতে রাজি। কিন্তু মনের মতো ছবি না হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় হল বন্ধ রাখতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে হলগুলো বন্ধ থাকে। অন্য সময় খোলা থাকলেও দর্শক একেবারেই আসে না। যার ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।’ আগামী ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ‘বস-টু’ সিনেমা বুকিং দিয়েছেন বলে বাংলাট্রিবিউনকে জানান। তিনি বলেন, ‘ভালো মানের সিনেমা তৈরি হলে হলগুলি চালু থাকতো লাভবান হতো হল মালিকরা, তেমনিভাবে স্বচ্ছন্দে চলতে পারত কর্মচারীদের পরিবার আর সরকার আয় করত বিপুল অংকের রাজস্ব।’
নওগাঁর সিনেমা হলগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধের ফলে অনেক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ছে। শ্রমিকরা এখন কেউ কাপড় ব্যবসা, ফুচকা ও চটপটির দোকান, ফুটপাতে ডিম বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
তাজ সিনেমা হলের কর্মচারী রিপন জানান, তিনি এই সিনেমা হলে প্রায় ১৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। হল বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকলেও তিনি প্রতিদিন এখানে আসেন। হলের মায়ায় ঘুরে ফিরে তার আসা। তিনি বলেন, ‘সংসারের অভাব অনটন লেগেই আছে। তাও হলে পড়ে থাকি, যতদিন বাঁচবো হলেই থাকবো।’
এদিকে দর্শক আব্দুল মালেক জানান, আগের দিনে ভালো ছবি তৈরি হতো নিয়মিত ছবি দেখতাম। এখন ভালো ছবি তেমন তৈরি হয় না। তাছাড়া পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে বসে ছবি দেখারও কোনও পরিবেশ নেই, তাই নিয়মিত ছবি দেখা হয় না।’
অপর দর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘এখন সিনেমার গল্প আর মনে দাগ কাটে না। অথচ আগেকার দিনের সিনেমার গল্প মনে দাগ কাটতো। কোনও কোনও ছবি ৩-৪ বার পর্যন্ত দেখা হতো। এখন ভালো গল্পের ছবি তৈরি হয় না তাই নিয়মিত ছবি দেখা হয় না।’
/এমএম/