এই কিংবদন্তিকে স্মরণ করে শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’। যার শ্লোগান ‘প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্যামেরা’।
১৮ আগস্ট শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত এ উৎসবের উদ্বোধন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও, উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জহির রায়হান-এর পুত্র অনল রায়হান এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম।
এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। উদ্বোধনী পর্বে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের নানা পর্যায় এবং ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। ছিল জহির রায়হান-এর জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে নানা আলোচনা। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জহির রায়হান নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন- ‘দাও দাও দুনিয়ার যতো গরীবকে আজ জাগিয়ে দাও’।
এছাড়া ভূপেন হাজারিকার ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’ গানটিও পরিবেশন করেন তারা। এর আগে, ‘রাজা যায় রাজা আসে, রানীরাও আসে যায়’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। আর উৎসবের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া, উৎসবস্থলের বাইরে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তার উদ্দেশ্যে উদীচী’র উদ্যোগে বুথ খোলা হয়েছে।
এদিকে আজ (১৯ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের অনুষ্ঠানমালা। এদিন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে প্রজন্ম টকিজের সালেহ সোবহান অনীম নির্মিত ‘পুনরাবৃত্তি’ ও সাঈদ আহমেদ সাকী নির্মিত ‘উপসংহার’ এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জন নির্মিত ‘মেঘমল্লার’। এই সকল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীই সকলের জন্য উন্মুক্ত।
প্রসঙ্গত, জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দু’বার বিয়ে করেন, ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে সুচন্দাকে।
জহির রায়হান দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭১ এর ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন এবং তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানি আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি।
১৯৭২ এর ৩০ জানুয়ারির পর তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
/এমএম/