এভাবেই টেলিভিশন জীবনের যাত্রা শুরু করেন দেশের অন্যতম টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব নওয়াজীশ আলী খান। চলতি বছরের এই দিনে (২৯ নভেম্বর ২০১৭) এসে যিনি ছুঁয়ে দিলেন টেলিভিশন কর্মজীবনের ৫০ বছরের মাইলফলক।
নওয়াজীশ আলী খানের ‘টেলিভিশনে কর্মজীবনের গৌরবময় ৫০ বছর’ পূর্ণ উপলক্ষে তার বর্তমান কর্মস্থল এটিএন বাংলার পক্ষ থেকে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ২৯ নভেম্বর দুপুরে এফডিসিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, ম. হামিদ, ফাতেমা তুজ জোহরা, ড. ইনামুল হকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ নওয়াজীশ আলী খানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে নওয়াজীশ আলী খানের হাতে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও পোট্রেট তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে নওয়াজীশ আলী খান জানান, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও সে সময়ে দেশে ফেরার সুযোগ পাননি তিনি। ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আফগানিস্তান ও ভারত হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগদান করেন প্রযোজক পদে। কাজ শুরু করেন গানের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এরপর ‘রত্নদ্বীপ’ নামে একটি আলেখ্যানুষ্ঠান তৈরি করেন। শুরু হয় এগিয়ে যাওয়ার গল্প। বিবিধ সার্থক অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে টেলিভিশন পুরস্কার পান তিনি। ১৯৭৬ সালে ‘বর্ণালী’ নামের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য দ্বিতীয়বার পান শ্রেষ্ঠ প্রযোজকের পুরস্কার। ফজলে লোহানীর উপস্থাপনায় বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানেরও প্রযোজক ছিলেন তিনি। এছাড়া বিটিভির জনপ্রিয় ঈদ ম্যাগাজিন ‘আনন্দমেলা’র অনেক পর্বের প্রযোজক ছিলেন তিনি। আরও প্রযোজনা করেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘সপ্তপর্না’।
অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবে নাটকে কাজ শুরু করেন আশির দশক থেকে। তার নাট্যরূপ দেওয়া নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত ‘পণ্ডিতমশাইয়ের তিন পায়ের কুকুরে’র সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে লেখা ‘পাদটীকা’ ও ‘টুনি মেম’, শরৎচন্দ্রের ‘অভাগীর স্বর্গ’, অধ্যাপক সৈয়দ অকরাম হোসেনের ‘ঘুণপোকা’ ইত্যাদি। নাটক প্রযোজনায় আসার পর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম নাটক ‘প্রথম প্রহর’ এর প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খান। বিটিভিতে হুমায়ূন আহমেদের যেসব ধারাবাহিক নাটক উল্লেখযোগ্য তার মধ্যে ‘বহুব্রীহি’ ও ‘অয়োময়’ নওয়াজীশ আলী খানের প্রযোজনা। একই লেখকের এক পর্বের অনেক নাটকই প্রযোজনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অসময়’, ‘অযাত্রা’, ‘বিবাহ’, ‘এসো নীপবনে’, ‘ঐজাবোর্ড’, ‘মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে’, ‘মরণরে তুহু মম’, ‘নিমফুল’, ‘জননী’, ‘কবি ও গাছমানুষ’ প্রভৃতি।