তুরস্কে পুরস্কৃত রোহিঙ্গাদের প্রামাণ্যচিত্র

প্রামাণ্যচিত্রের একটি দৃশ্যবাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ তুরস্কের আনকারায় হাক-ইস স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতলো। এ ছবির জন্য জসিম আহমেদ সেরা পরিচালক হয়েছেন। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) আনকারার হিলটন গার্ডেন ইন হোটেলে সমাপনী আয়োজনে তার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয়।
উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নিয়েছে ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’। তুরস্ক সরকারের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এ আয়োজন শুরু হয় গেল ১৫ ডিসেম্বর। তুরস্কের সংস্কৃতি ও ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‌‘হাঁক- ইস’ শিরোনামে এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
পুরস্কার হাতে জসিম আহমেদ১২৪টি দেশ থেকে ৫ হাজার ৪০৪টি ছবি জমা পড়ে এবার। এর মধ্যে ছিল তুরস্কের ৫৬২টি, ভারতের ৫৬২টি, আমেরিকার ৫০০টি, ইরানের ৪৪৮টি, ইতালির ২৪৮টি, স্পেনের ২৪৭টি, ব্রাজিলের ২২৮টি, ফ্রান্সের ২২৬টি, রাশিয়ার ১১৯টি, জার্মানির ১২৬টি, কানাডার ১২৫টি, আর্জেন্টিনার ১২২টি, অস্ট্রেলিয়ার ৮৪টি, মেক্সিকোর ৭৬টি, পর্তুগালের ৭১টি, মিশরের ৫৮টি, পোল্যান্ডের ৫৪টি, গ্রিসের ৪৯টি, তাইওয়ানের ৩৯টি ও বাংলাদেশের ২টি ছবি।
পুরস্কার জয়ের সুখবর জানিয়ে জসিম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, “বাংলাদেশ থেকে মাত্র দুটি ছবি জমা পড়ায় আলাদাভাবে আমাদের লাল-সবুজ দেশের কথা বলা হয়নি উৎসবের ওয়েবসাইটে। কিন্তু এ দুটির মধ্যে ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত ১১টি ছবির তালিকায় চলে আসে। শেষ পর্যন্ত সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতলাম। খুব আনন্দ হচ্ছে। একইসঙ্গে আমি বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত। রোহিঙ্গা সংকট ও তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে ছবিটি তৈরি করেছি।"
এর আগে ইতালির নেপলস মানবাধিকার চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নেয় ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’। ন্যাপোলিতে ৬ থেকে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।
এই প্রামাণ্যচিত্রের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে— ওপরের দিকে তুলে ধরা একজোড়া স্যান্ডেল কাকে দেখাচ্ছে একটি রোহিঙ্গা শিশু? মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীকে? নাকি রাশিয়া, চীন ও ভারতসহ পরাশক্তিদের, যারা ব্যবসায়িক স্বার্থে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যাকে অন্ধভাবে সমর্থন করছে? নাকি গোটা পৃথিবীর সবাইকে- যারা নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ দেখেও চুপ করে বসে আছে? কোনও ধারাবর্ণনা ও সাক্ষাৎকার ছাড়াই সাজানো ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’-এ ইংরেজি, ইতালিয়ান, ফরাসি, স্প্যানিশ ও তুর্কি ভাষার ওপেন ক্যাপশন রয়েছে।
৪ মিনিট ১৩ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ পুরোটাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে মোবাইল ফোনে ধারণ করেছেন নির্মাতা জসিম আহমেদ। একটি শরণার্থী দলের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়াকে ঘিরে গল্প শুরু হয়। শেষে দেখা যাবে শরণার্থীদের আরেকটি দল আসছে ক্যাম্পে। ছবিটির সংগীত পরিচালনা ও শব্দসজ্জা করেছেন রিপন নাথ। পাণ্ডুলিপি লিখেছেন ফরিদ আহমেদ।
জসিম আহমেদের আগের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘দাগ’ অংশ নিয়েছে ৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের শর্ট ফিল্ম কর্নারে। এটি এখন যুক্তরাজ্যভিত্তিক শর্ট ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে আমেরিকার মূলধারার টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে।  ইউরোপের টেলিভিশনে ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবিটির প্রিমিয়ার হয়।