২০১৭ থেকে ১৮: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

‘নাউ আই অ্যাম রেডি টু ফাইট’

বাঁধন/ ছবি: রফিকুল ইসলামআজমেরী হক বাঁধন। ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় ২য় রানারআপ নির্বাচিত তিনি। সে হিসেবে তার ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। শুরু থেকে যিনি ভালো অভিনেত্রীর ছাপ রেখে চলেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি শেষ করেছেন দন্ত চিকিৎসক বিষয়ে পড়াশুনা। ২০১০ সালে বিয়ে। মা হন পরের বছর। তবে তার ব্যক্তিজীবনের ছন্দপতনের খবর মিলেছে গেল বছর, ২০১৭ সালে। খানিক টান পড়েছে ক্যারিয়ারেও। যদিও বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে তিনি ফের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন।
২০১৭: শুরু থেকেই বলি। ১১টা বছর কাজ করছি এই মিডিয়ায়। এখান থেকে অনেক অর্জন আছে আমার। শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নয়, আমি ডেন্টিস্ট হয়েছি এই মিডিয়ার কারণেই। লাক্স থেকে বেরিয়ে যখন হ‌ুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাস অবলম্বনে ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবির রিহার্সেল করছিলাম, তখন স্যারই আমাকে একদিন ডেকে বললেন- ‘তুমি এক জীবনে অনেক সিনেমা করতে পারবে। কিন্তু ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পাবে না। যাও, পরীক্ষায় অংশ নাও।’
স্যারের এই কথায় শুটিংয়ের ঠিক আগের দিন আমি সিদ্ধান্ত নিই পরীক্ষা দেওয়ার। এরজন্য এই মানুষটার কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। উনি ওভাবে না বললে হয়তো আমার লেখাপড়াটাই আর কনটিনিউ হতো না।
শুধু আমি নই, এই যে আমার মেয়েটাকে দেখছেন, আমি মনে করি ওর রক্ত-মাংস এই মিডিয়ার আলো-বাতাস-অর্থে গড়া। তবুও মিডিয়াকে আমি সেভাবে সময় দিইনি। কারণ গত ছয়টা বছর আমি আমার মাতৃত্বকে এনজয় করেছি। মেয়েটাকে ছাড়া নিজেকে নিয়ে কোনও প্ল্যান করিনি। কাজ করেছি কিন্তু কোনও প্ল্যান ছাড়াই।
গত তিনটা বছর প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে ছিলাম, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। বিশেষ করে ২০১৭ সাল আমার জীবনের সবচেয়ে বিষণ্ণতম বছর। বলতে পারেন, এ বছরই আমি নিজের এই দীর্ঘ বিষণ্নতা থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খোঁজার চেষ্টা করি।
বাঁধন/ ছবি: রফিকুল ইসলাম২০১৮: মাত্র তিনমাস আগে আমি নিজেকে নিজে সকাল-সন্ধ্যা শুধু প্রশ্ন করতে লাগলাম। এই যে ১১টা বছর পার করে দিলাম- আমি মিডিয়াকে আসলে কী দিলাম? দাগ কাটার মতো কোনও কাজ করেছি কি? কোনও সদুত্তর খুঁজে পাইনি। অথচ আমি বাঁধন তো এই মিডিয়া থেকে কম কিছু পাইনি। তাহলে এবার আমাকে কিছু দেওয়া উচিত।
এই ভাবনা থেকে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। পথ খুঁজতে থাকলাম নতুন বছরে নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে। এমন কিছু কাজ করে দেখাতে- যার মাধ্যমে শুধু আমি নই, মিডিয়াটাও যেনও উপকৃত হয়।
মনে হলো, এখনই সময়। শুরু করলাম ডায়েট আর জিম দিয়ে। ওজন কমালাম ১২ কেজি! এরপর ভাবলাম এবার নিজের একটা পোর্টফোলিও তৈরি করা দরকার। যেটা ১১ বছর আগেই করার দরকার ছিল। খুঁজতে থাকলাম দেশের অন্যতম ছবিয়াল রফিকুল ইসলাম র‌্যাফ ফকে। কিন্তু কিছুতেই তাকে ধরতে পারছিলাম না। পরে আমাদের বিদ্যা সিনহা মিমের সহযোগিতায় রফিক ভাইয়ের মুখোমুখি বসলাম। কসটিউম ডিজাইনার মুকুলকে নিয়ে প্ল্যান করলাম।
তৈরি করলাম ফটোশুটের থিম। ২০১৭ সালের শেষ প্রান্তে এসে টানা শুট করলাম। চেষ্টা করলাম নতুন বছরে নতুন আমাকে তুলে ধরার। যার মধ্যে রয়েছে ডন লুক, স্পোর্টি লুক, শাড়ি ফিউশন, বৌ লুক, ওয়েস্টার্ন লুক ও বাঁধন লুক! একটি ছবি এরমধ্যে প্রকাশও করেছি। বাকিগুলো করবো পর্যায়ক্রমে।
এই বিভিন্ন ধারার লুকের মাধ্যমে আমি জানাতে চাই, নাউ আই অ্যাম রেডি টু ফাইট। একেবারেই নতুন করে কাজ করতে চাই নতুন বছরে। এই ফটোশুটের মাধ্যমে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। যে কোনও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষুধা বোধ করেছি।
আর প্রত্যাশা করছি, সবার সহযোগিতায় এবার আমি আমার ক্ষুধা নিবারণ করতে পারবো, নতুন কিছু দিতে পারবো মিডিয়াকে। যার কাছে আমার অনেক ঋণ।