হোটেলে ওঠার সময়ই পরিচয়ের পর জানিয়ে রেখেছিলাম, কান উৎসব নিয়ে লেখালেখি করতে এসেছি। তাই ভদ্রলোক যেন আমার চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি উল্লেখ করলেন, এখন বাসই ভরসা। ২০০ নম্বর বাসে চেপে কানে যেতে হবে। তবে এজন্য হোটেল থেকে একটু বেশি হাঁটতে হবে। তারপর মিলবে রিজন্স বাসস্টপ। সেখান থেকে দেড় ইউরো দিয়ে টিকিট কেটে কান যাত্রা শুরু করতে হবে।
মঙ্গলবার (৮ মে) কানের ৭১তম আসরের উদ্বোধন। তার ওপর দুপুর আড়াইটায় মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের সংবাদ সম্মেলন। এর মধ্যে ধর্মঘটের ঝামেলা। তাই আগেভাগে যাওয়াই উত্তম মনে হলো। রিজন্স বাসস্টপে ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর বাসের দেখা পেলাম। কিন্তু ভেতরে গাদাগাদি অবস্থা। ট্রেন ধর্মঘটের ফল আর কি! নড়ারও সুযোগ নেই। সড়কগুলো আঁকাবাকা, তাই কবজির জোর কত, সেই পরীক্ষা দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হলো।
শ্রমক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সংস্কার পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফরাসি রেলকর্মীরা ধর্মঘট করছেন। এ কারণে ফরাসি রেল ব্যবস্থায় ব্যাপক ব্যাঘাত যে ঘটছে তা ভালোই টের পাওয়া গেলো। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আছেন দুর্ভোগে। বাস কোথাও ব্রেক করলে পায়ের শক্তিমত্তার পরীক্ষাও হয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ফরাসিরা। একইসঙ্গে কান, নিস, জুয়া-লা-পা, গলফে-জুয়া, অন্তিবে আসা পর্যটকরাও।
জুয়া-লা-পা থেকে ট্রেনে চড়ে কানে যাওয়া যায় সাত-আট মিনিটেই। কিন্তু বাসে পাক্কা পৌনে ১ ঘণ্টা লাগলো। কানে নেমে নাস্তা পর্ব সেরেই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের ভেতরে যেতে দেরি করলাম না। প্রেস বক্স থেকে দরকারি কাগজপত্র নিয়ে প্রেস রুমের কম্পিউটারে বসে গেলাম। অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া প্রত্যেক সাংবাদিকের জন্য পৃথক আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছেন আয়োজকরা। সেগুলো কাজে লাগিয়ে প্রেস রুমের কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। আছে হেডফোনও। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রঙিন প্রিন্ট দেওয়ার সুযোগও রেখেছেন উৎসব কর্তৃপক্ষ।
হৈ-হুল্লোড় উপভোগ করে ফিরে এলাম প্রেস রুমে। এখানকার একটি দরজা সারাক্ষণ বন্ধ থাকে। কারণ ওই দরজা পেরোলেই লালগালিচার সিঁড়ি। সেখান থেকে তারকাদের পায়চারি স্পষ্ট দেখা যায়। কেট ব্ল্যানচেট, ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টসহ মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের দেখলাম। নজর এড়ালেন না জুলিয়ান মুর। চোখ ধাঁধানো মনে হলো পেনেলোপি ক্রুজকে। উৎসবের উদ্বোধনী ছবি ‘এভরিবডি নৌস’-এর এই অভিনেত্রী কালো গাউনে আলো ছড়িয়েছেন।
বিকালে ভূমধ্যসাগরের সৈকতে গিয়ে নীল জলরাশির সঙ্গে বোনাস হিসেবে মিললো মিঠে হাওয়া। সূর্যের তাপ তখন নরম আলোর রূপ নিয়েছে। সারি সারি ইয়ট শুভ্র আমেজ নিয়ে নোঙর করে আছে। উৎসবকে ঘিরে সরগরম কানের সর্বত্রই আছে এমন অনেক মুগ্ধতা। তাই সকালের কষ্ট বিকালে মিইয়ে গেলো নিমিষে।